স্পোর্টস ডেস্ক

৩১ আগস্ট, ২০১৬ ১২:৪২

সব ক্রিকেটারকেই বাংলাদেশ সফরে যাওয়া উচিত: মাইকেল ভন

বাংলাদেশ সফরে যেতে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন  তাঁর উত্তরসূরিদের পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ দৈনিক দ্যটেলিগ্রাফ-এ লেখা নিজের কলামে। খেলায়াড়ি জীবনে ভনের প্রথম বিদেশ সফর ছিল বাংলাদেশেই। সেই অভিজ্ঞতাও তোলে ধরে তিনি লিখেছেন কোন শঙ্কাবোধ তিনি করেননি।

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটাররা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমি সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। তবু আমার বিশ্বাস, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ওপর তাদের আস্থা রাখা উচিত এবং সবারই সেখানে যাওয়া উচিত।

এ পরিস্থিতি নিয়ে আমার ভালো ধারণা আছে। খেলোয়াড়ি জীবনে এমন অনেক নিরাপত্তা বৈঠকে বসেছি আমি। ২০০৩ সালে অনেক লম্বা লম্বা আলোচনা হয়েছে বিশ্বকাপের ম্যাচে জিম্বাবুয়েতে যাব কি না। ‘সন্স অ্যান্ড ডটারস অব জিম্বাবুয়ে’ নামের এক সংগঠন সরাসরি হুমকি দিয়েছিল আমাদের এবং সেটা ছিল খুবই ভীতিকর অভিজ্ঞতা। আমি তখন একেবারেই তরুণ ছিলাম, তাই অভিজ্ঞদের অনুসরণ করেছি। কিন্তু কিছুদিন পরে আমার মনে হয়েছিল, আমাদের জিম্বাবুয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

আমাদের তখনো নিশ্চিত করা হয়েছিল, আমরা নিরাপদ থাকব। আমরা যে রাজনৈতিক চালের গুটিতে পরিণত হয়েছিলাম, সেটা তখন বুঝতে পারিনি। আবার অধিনায়ক হিসেবে ২০০৪ সালে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই জিম্বাবুয়েতে গিয়েছি। কারণ, আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার দায়িত্ব ক্রিকেট খেলা, আমি রাজনীতিবিদ নই।

২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের (টুইন টাওয়ার হামলা) পর ভারত সফরের আগেও আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুজন খেলোয়াড়, রবার্ট ক্রফট ও অ্যান্ডি ক্যাডিক সরে দাঁড়ায়।

খেলোয়াড় হিসেবে আপনাকে নিরাপত্তার সারসংক্ষেপ জানানো হয়—কীভাবে আপনাকে একজন প্রেসিডেন্টের সমান নিরাপত্তা দেওয়া হবে, সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী ও নিরাপত্তার চাদরের ব্যবস্থা থাকবে। এসব শুনে যে কেউ প্রথমেই যে প্রশ্নটা করবে তা হলো, এত নিরাপত্তাই যদি প্রয়োজন হচ্ছে, তাহলে আমরা ক্রিকেট খেলতে সেখানে যাচ্ছিই-বা কেন? কিছু ম্যাচ খেলার জন্য এত ঝুঁকি নেওয়াটা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।

কিন্তু তখনই বুঝতে হবে, এটাই আপনার কাজ। আপনার আন্তর্জাতিক পরিচিতি বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে। আপনি চান, এ কাজে আপনিই সেরা, সবাই এ বিশ্বাস রাখুক। যেমন রেগ ডিকাসন একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তাহলে তিনিও তাঁর কাজ করছেন—এ বিশ্বাস থাকা উচিত। তিনি একজন ভালো মানুষ এবং আমার মনে হয় না রেগ ক্রিকেট রাজনীতি বা অর্থের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। তিনি প্রমাণ দেখেই তাঁর সিদ্ধান্ত নেন, আর এ জন্যই তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে। তিনি বলেছেন, খেলোয়াড়েরা নিরাপদ থাকবেন এবং আমার ধারণাও তা-ই।

ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় হিসেবে কোনো সফরেই আমি নিরাপত্তা নিয়ে কখনো শঙ্কাবোধ করিনি। নিরাপত্তা নিয়ে ছটফটে বোধ করার কারণ আশপাশের লোকজন সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ইদানীং আমরা ইন্টারনেটেই সবকিছু পড়ি; আপনার পরিবার যখন এ ধরনের কোনো গল্প পড়ে, তখন সেটা তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। এসবই আপনার মনে অন্য ধারণা এনে দেয়।

একটি দলে সব সময়ই বিভিন্ন মানসিকতার মানুষ থাকে। অনেক তরুণ থাকবে যারা অবিবাহিত, তারা সেখানে যেতে চাইবে, ক্রিকেট খেলতে চাইবে। অনেকের স্ত্রী-সন্তান আছে এবং তারা ভাববে কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য এত ঝুঁকি কেন নিচ্ছি!

যে চিন্তাটা খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বেশি তাড়া দেয়, সেটি হলো শুধু অর্থনৈতিক কারণেই তাদের যেতে হচ্ছে। আপনার মনে সন্দেহ জাগে, বোর্ড সম্ভবত টিভি-স্বত্ব হারানোর ভয়ে কিংবা রাজনৈতিক কারণে আপনাদের পাঠাচ্ছে। এ কারণেই যাঁরা খেলোয়াড়দের বলছেন ‘সফরটি নিরাপদ’, তাঁদেরও যাওয়া উচিত। বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা টম হ্যারিসন, চেয়ারম্যান কলিন গ্রেভস ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের উচিত খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিমানে চড়া। এটাই পরিস্থিতি অনেক বদলে দেবে।

অধিনায়কদেরও কাজ এ মুহূর্তে নেতৃত্ব দেওয়া। কুক বলেছে সে যেতে চায়, এটি খুব ভালো খবর। আমাদের এখন দেখতে হবে এউইন মরগানও রাজি হয় কি না। আমার ধারণা সেও যদি যায়, তবে অন্য খেলোয়াড়েরাও তাদের অনুসরণ করবে। যখন অধিনায়কেরা যেতে রাজি হবে, সেটি অন্যদের একটি ভালো বার্তা দেবে।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে পল ফারব্রেস ও ট্রেভর বেলিসও ছিলেন। তাঁরা কিন্তু বাংলাদেশে যেতে প্রস্তুত। ‘কী হতে পারে’—সেটা চোখের সামনেই দেখেছেন তাঁরা, তবু এ সফরে যাচ্ছেন এ দুজন। এটাই কিন্তু খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করতে পারে।

ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে আমাদের জন্য গুরুত্বহীন। আগামী দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ইংল্যান্ডে হবে। তাই এ মুহূর্তে বাংলাদেশে খেলে আমাদের কোনো লাভ নেই। আইসিসির এফটিপি (ভবিষ্যৎ সফরসূচি) ঠিক রাখার জন্যই এটি খেলা হচ্ছে।

কিন্তু টেস্ট সিরিজটি ভিন্ন। ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে এই সিরিজ ভালো প্রস্তুতির সুযোগ দেবে। ভারতে প্রথম টেস্ট খেলার আগে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই খেলা উচিত। ভারতে খেলার আগে এর চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তুতির আশা করতে পারেন না। বাংলাদেশ এখন বেশ ভালো দল এবং তারা ইংল্যান্ডকে খুব কঠিন সময় উপহার দিতে পারে। ভারতে গিয়ে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার চেয়ে অনেক ভালো হবে এটি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত