স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:২৩

অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলারদের হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবর্ধনা প্রদান

হাতে ধরা টাকা ভরতি খাম। হোটেল সোনারগাঁওয়ের হলরুমের আলো-আঁধারিতে বাসুদেব সরকারের মুখটা খুব উজ্জ্বল দেখাল।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের হাত ধরে বাবা বাসুদেব যখন মঞ্চে উঠলেন, হলরুম জুড়ে হাততালির শব্দ। বাসুদেবের চোখে তখন জল। আনন্দে কাঁদছেন টাঙ্গাইলের উত্তর পাথালিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক।

শুধু কৃষ্ণাই নয়, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দলের ২৩ সদস্যের সবাইকে আজ হোটেল সোনারগাঁয়ে এক ছাতার নিচে এনেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। চূড়ান্ত পর্বে ওঠা দলের মেয়েদের সঙ্গে ছিলেন তাদের মা–বাবারাও। এশিয়ার সেরা আটে ওঠা সোনার মেয়েদের আজ সংবর্ধনা দিয়েছে বাফুফে। অসচ্ছল পরিবারে, দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা ফুটবলারদের মা–বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই আর্থিক পুরস্কার।

তিনটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান—সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস, জেমকন গ্রুপ ও কালডয়েল ডেভলপমেন্ট লিমিটেড প্রত্যেক ফুটবলারকে দিয়েছে ৫০ হাজার করে টাকা। সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকা পেয়েছে একেকজন ফুটবলার। এসএস সলিউশনের কর্মকর্তা কাজী সারাজিন ব্রাটসলার ঘোষণা দিলেন, মেয়েদের আগামী এক বছরের আবাসিক ক্যাম্পের মাসিক ভাতা দেবে এই প্রতিষ্ঠান।

জেমকন গ্রুপের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন, জেমকন গ্রুপের কাজী এনাম আহমেদ ও কালডয়েলের খায়রুল মজিদ মাহমুদ মেয়েদের হাতে টাকাগুলো তুলে দেন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কৃষ্ণা-সানজিদাদের নিয়ে দেখছেন আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। সংবর্ধনা দেওয়ার সময় মেয়েদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা জাতিকে গর্বিত করেছ। আজ সন্ধ্যাটা তোমাদের। যে সাফল্য দেখিয়েছ, তাতে আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল তোমাদের। ভবিষ্যতে আবারও যাতে এভাবে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করার সুযোগ করে দিতে পারো তোমরা, সেই অপেক্ষায় থাকব।’

রংপুর থেকে এসেছেন সিরাত জাহান স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী। আনন্দের অনুভূতি কীভাবে বর্ণনা করবেন তা যেন বুঝে উঠতেই পাচ্ছিলেন না, ‘আগে কোনো দিন এমন বড় হোটেলে ঢুকিনি। মেয়ের হাত ধরে এখানে আসার সুযোগ মিলেছে, এই আনন্দ যে কেমন তা বলে বোঝাতে পারব না।’

ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের ফুটবলার মারিয়া মান্দার মা এনতা মান্দা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় গ্রামের রাস্তায় মাটি কাটেন বছরের বেশির ভাগ সময়। বাকি সময়ে অন্যের জমিতে টুকটাক চাষাবাদ করেন। মেয়ের সৌজন্যে এমন আর্থিক অনুদান পেয়ে খুশিতে আত্মহারা এনতা, ‘কখনোই ভাবিনি আমার মেয়ে ফুটবল খেলে এভাবে টাকা এনে দেবে। এবার হয়তো অন্যের জমিতে আর কাজ করতে হবে না।’

মেয়েদের সাফল্যের স্বীকৃতির জন্য এভাবে আর্থিক অনুদান দিতে পেরে অনুষ্ঠানে কেঁদেই ফেললেন বাফুফের মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। বললেন, এই আর্থিক পুরস্কার মেয়েদের জন্য অন্তহীন প্রেরণা, ‘আমরা এখানে এসেছি অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে। এ জন্যই কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। এই পুরস্কার ওদের অনেক অনুপ্রেরণা জোগাবে। মেয়েদের পরিবার থেকেও যাতে ওরা সহযোগিতা পায়, এ জন্যই অভিভাবকদের নিয়ে এসেছি। উনারা দেখুন তাঁদের মেয়েরা কোথায় আছে, কাদের কাছে আছে, কতখানি নিরাপদে আছে।
সূত্র: প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত