স্পোর্টস ডেস্ক

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৯:২৬

‘দ্বিতীয় জন্মদাতা’ কাস্ত্রোর শেষকৃত্যে ম্যারাডোনা

যাঁকে ‘দ্বিতীয় জন্মদাতা’ বলে মানেন, তাঁর অন্তিমযাত্রায় পাশে না থেকে কি পারেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা? ‘বন্ধু’ ফিদেল কাস্ত্রোকে শেষবিদায় জানাতে কিউবায় পৌঁছে তাই আবেগাপ্লুত কিংবদন্তি এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার।

কাস্ত্রোর শেষকৃত্যে গিয়ে শোকগ্রস্ত কিউবানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজেকেও একজন ‘কিউবান’ হিসেবে দাবি করেছেন।

কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনার প্রথম দেখা ১৯৮৭ সালে। এর মাত্র এক বছর আগেই মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার জাদুতে মোহাচ্ছন্ন হয়েছিল পুরো বিশ্ব। কাস্ত্রো নিজে সব সময়ই আর্জেন্টিনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য একটা সম্পর্ক অনুভব করেছেন। শুধু লাতিন সংস্কৃতির কারণে নয়, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েই তো স্বপ্নের বিপ্লবটাকে সত্যি করেছিলেন তিনি।

ফুটবল মাঠের আরেক ‘চে’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়, ম্যারাডোনা যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কয়েক দফায় কিউবায় চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাওয়া ম্যারাডোনা ২০০৪ সালে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে ছিলেন। কোকেনের নেশা থেকে বেরোতে পারছিলেন না কিছুতেই। মুটিয়ে যেতে যেতে একসময় ওজন হয়ে গিয়েছিল ১২৭ কেজি।

আর্জেন্টিনার হাসপাতালগুলো তখন ‘মরণাপন্ন’ ম্যারাডোনার চিকিৎসা করতে চায়নি। আসলে তারা চায়নি, ম্যারাডোনার মৃত্যুটা তাদের ওখানে হোক। সেই সময়ে এগিয়ে আসেন কাস্ত্রো। কিংবদন্তি এই ফুটবলারের জন্য খুলে দেন কিউবার দরজা। সেখানকার হাসপাতালেই হয় ম্যারাডোনার চিকিৎসা, দ্বিতীয় জীবন পান তিনি। সেই থেকেই কাস্ত্রোকে ‘দ্বিতীয় জন্মদাতা’ হিসেবে মানেন ম্যারাডোনা।

ম্যারাডোনাকে নতুন জীবন দেওয়া কাস্ত্রো ৯০ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানান গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। নয় দিনের শোক ঘোষণা করা হয় কিউবায়। আগামীকাল তাঁর শেষকৃত্য। যেখানে কাস্ত্রোর শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বনেতারাও।

কিউবায় পৌঁছে ম্যারাডোনা আরেকবার কাস্ত্রোকে স্মরণ করলেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। বিপ্লবী এই নেতার রাজনৈতিক গুরুত্ব কী ছিল, সেটাও বলেছেন তিনি, ‘আমি মনে করি, এ পৃথিবী তার নেতা হারিয়েছে। আমিও নিজেকে একজন কিউবান মনে করছি। এখন অনেক খেলোয়াড় থাকতে পারে। কিন্তু তিনি বিশ্ব একাদশের মালিক ছিলেন। কারণ, বিভিন্ন বিষয় সমাধান করার জন্য তাঁর মতো ক্যারিশমাটিক নেতা এখন দক্ষিণ আমেরিকা বা ইউরোপে নেই।’

২০০৪ সালে কাস্ত্রোকে পাশে পাওয়ার স্মৃতিও রোমন্থন করেন ম্যারাডোনা, ‘একমাত্র ফিদেলই আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন। আমাকে কী করতে হবে, আর আমি কী করতে পারব না, সে বিষয়ে বলেছিলেন।’

কাস্ত্রোর দাড়িওলা মুখাবয়বের একটি ট্যাটু নিজের বাঁ পায়ে করিয়েছেন ম্যারাডোনা। এটা ভালোবাসার একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মহান এই নেতাকে চিরদিন নিজের হৃদয়ে রাখবেন তিনি, ‘কোনো সন্দেহ ছাড়াই তিনি ছিলেন সেরা। কিন্তু এখন তাঁর মাহাত্ম্য আমাদের হৃদয়ে লালন করতে হবে। ফিদেলের মৃত্যু নেই।’
সূত্র: এএফপি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত