নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ মার্চ, ২০২০ ০১:৪৪

অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছিলেন মাশরাফি

বৃহস্পতিবার সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোণা দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মাশরাফি বলেন- ধন্যবাদ সবাইকে। আমি কিছু বলতে চাই। কালকে আমার শেষ ম্যাচ অধিনায়ক হিসেবে। আমার প্রতি এতো দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আমার নেতৃত্বে যতো খেলোয়াড় খেলেছে। বাংলাদেশ দলের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত এই প্রক্রিয়াটা এতো সহজ ছিল না, শেষ পাঁচ-ছয় বছরের যে জার্নি ছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজমেন্ট যারা ছিল। যাদের অধীনে আমি খেলেছি, আমি অধিনায়কত্ব করেছি, তারা সবাই আমাকে খুব কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা করেছে এবং আমার অধিনায়কত্বে যতোটুকু মনে হয় হাথুরুসিংহে দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার আগে হয়তোবা দুই-তিন দফা পেয়েছি, বাট ইনজুরির কারণে করতে পারিনি। ফাইনালি শুরু হয় হাথুরুসিংহে, খালেদ মাহমুদ সুহজ, স্টিভ রোডস এবং ডমিঙ্গো দিয়ে শেষ হচ্ছে। নির্বাচক এবং বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন এবং প্রত্যেকটা বোর্ড স্টাফ থেকে শুরু করে যারাই ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য।

আমি ধন্যবাদ জানাই আপনারা যারা আছেন মিডিয়া সবাইকে, আপনারা অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন। সবশেষে অবশ্যই সমর্থক, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা অবশ্যই সম্ভব হতো না, সবাইকে ধন্যবাদ। আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি, অবসরে যাচ্ছি। আর আগামীকাল জিম্বাবুয়ের সাথে তৃতীয় ওয়ানডে অবশ্যই আমার অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার যদি সুযোগ আসে আমার। এবং আমার শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য। আমার বিশ্বাস, (সে) বাংলাদেশ দলকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। এবং যদি আমি দলে থাকি আমিও চেষ্টা করব আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বা আমার ভেতরে যতোটুকু আছে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।

এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাশরাফি।

প্রশ্ন: এ সিরিজের আগেই প্রেসিডেন্ট একবার কথা প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সিদ্ধান্তটা কি বোর্ড আপনাকে নিয়ে দিল না আপনি নিলেন?

মাশরাফি: না, সিদ্ধান্তটা আমিই নিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনি কারো নাম বলবেন যে আপনার দায়িত্বটা বয়ে নিয়ে যেতে পারে?

মাশরাফি: কারো নাম বলা তো কঠিন। অবশ্যই এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। তবে সিনিয়র যারা আছে, সাকিব তো এখন বাইরে, সিনিয়র আরো যে তিনজন আছে...। আর প্রক্রিয়াটা কি আমি জানি না, মানে সাকিব আসার পরে কি হবে। এখন থেকে প্রক্রিয়াটা কাউকে দিয়ে শুরু হবে কিনা। তবে আমি শিউর যারা তিনজন বর্তমানে আছে তাদের অধিনায়কত্ব করার এবিলিটি (সামর্থ্য) আছে। আমি আশা করছি যে সেরা তাকেই মনোনীত করা হবে।

প্রশ্ন: কতোটা ইমোশনাল ছিল ডিসিশনটা, কতোটা কঠিন ছিল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া?

মাশরাফি: না, দেখেন অধিনায়কত্ব জিনিসটাকে কখনোই আমি এতোটা গুরুত্বের জায়গায় আনিনি। সবসময় গর্ববোধ করি যে আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলি বা খেলেছি। অধিনায়কত্বটা আমাকে বিসিবি সুযোগ দিয়েছে, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কখনো হয়েছে, কখনো হয়নি। বাট সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে। ধরেন সামনে বিশ^কাপ আসছে ২০২৩, যেহেতু সবাই কথা বলছে আমাদের নেক্সট পরিকল্পনা করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় নতুন কেউ আসার রাইট টাইম। সে টিমকে এখন থেকেই গুছিয়ে নিক। এবং আমি আশা করব যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটায় যেন স্থির থাকে। এই অধিনায়ক যেন ২০২৩ বিশ্বকাপের অধিনায়ক হয়।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আপনার নেতৃত্বে দল ভালো খেলেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো খেলেছে। প্রপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মিলালে কোনো আক্ষেপ আছে কিনা? কোনো কিছু না পাওয়ার হতাশা আছে কিনা?

মাশরাফি: আমার ক্যারিয়ারটাই তো অনেক আগে শেষ হয়ে যেতে পারত। যতোটুকু পেয়েছি আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে এতোটুকু আসতে পেরেছি। প্রাপ্তির বিষয়ে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে বলা খুব কঠিন। অপ্রাপ্তিটা খুব সহজেই বলতে পারা যায়। সুতরাং, অনেক অপ্রাপ্তি আছে, কিন্তু সেটাও দিন শেষে আমার কাছে প্রাপ্তি। কারণ এখটা ফ্লোতে কখনোই জীবন চলে না। ভালো-খারাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ওটাই হয়েছে। তবে সত্যি বলতে বলবো যে আমি এই দায়িত্বটাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পালনের চেষ্টা করেছি। এখন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তো আসলে আপনারা-সমর্থকরা ভালো জানেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা খোজার চেষ্টা করিনি কখনো।

প্রশ্ন: গতপরশু দিন বলেছিলেন ছেড়ে দিতে পারি, আবার বলেছিলেন ভাবি। এই অল্প সময়ের মধ্যে কি ....

মাশরাফি: সত্যি বলতে এতো ভাবাভাবি করিনি। আমার কাছে মনে হয় সবাই, যে কেউ...আপনি যদি বাইরের চিন্তা করেন, সবাই চাচ্ছে ২০২৩ এর জন্য নতুন অধিনায়ক আনার সময় হয়েছে। তো আমাকে কিন্তু ভাবা উচিত, আমি মনে করি আমার ভাবা উচিত ছিল। ভাবার চেষ্টা করেও আমি আসলে এতো ভাবতে পারিনি। আমি আসলে এতো ভাবিনি। আজকে সকালে মনে হয়েছে, দ্যাটস এনাফ! টু বি অনেস্ট আজকে সকালেই মনে হয়েছে। কালকে পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম। কিন্তু আজকে সকালে মনে হয়েছে, ‘ইটস এনাফ’ (যথেষ্ট হয়েছে)। তবে যেটা বললাম, যে কথাগুলো হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলো আমার জায়গায় আপনি হলেও আপনাকে ভাবাবে। এটা অবশ্যই নরমাল প্রসেস। তবে যে কথাগুলো হয়েছে আমি আশা করবো সে কথায় যেন স্থির থাকে। পরবর্তী অধিনায়ক যেন হয় ২০২৩ এর। এমন যেন না হয় বিশ্বকাপের একবছর আগে হঠাৎ বলা হল ওকে দিয়ে চলছে না। এমনটা বাংলাদেশে অহরহ হয়। সেটা হলে কিন্তু যে প্রসেসটা চালু হয়েছে সেটায় ¯িদ্বক্ট থাকা হল না। আমি বিশ্বাস করি আমি পেশাদারিত্বের সঙ্গে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। আমি আশা করব যারা পরবর্তী অধিনায়ককে নিয়ে ভাববে তারাও যেন যে পেশাদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে সেটা যেন ধরে রাখে। তাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তারপর যেন ২০২৩ এর চিন্তা করা হয়।

প্রশ্ন: সাকিব না ফেরা পর্যন্ত আপনাকে রেখে দেওয়ার একটা কথা চলছিল....

মাশরাফি: না, আমার সাথে এরকম আলোচনা হয়নি আসলে। যেটা বললাম, আমি ভাবতে পারব তখনি...আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় এতো আলোচনায় যাওয়ার আমার দরকারও ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে ‘ইটস গুড এনাফ’ (এই ভালো হলো)।

প্রশ্ন: শুরু করার সময় একটা টার্গেট তো অবশ্যই ছিল। যেখানে রেখে যাচ্ছেন, টার্গেট কি ফুলফিল হয়েছে?

মাশরাফি: এটা পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না যে আপনি ফুলফিল করে যাচ্ছেন। তবে যেটা বললাম, প্রাপ্তির কথা আমি বলতে পারব না। অপ্রাপ্তির কথা চোখ বন্ধ করেই মানুষ বলে দিতে পারে যে আসলে ব্যর্থতাগুলো কি ছিল। আমি আসলে জানি না প্রাপ্তি কি ছিল, অপ্রাপ্তি কি ছিল। তবে এতোটুকু নিশ্চিত, আমাকে যখন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করতে দেওয়া হয় আমি জানি যে এটার দায়িত্ব  কতো, মানে এখানে শুধু চাপই না, শুধু চাপের কথাটাই বলি, এখানে কতো ইমোশনন্স জড়িয়ে আছে, কতো মানুষ তাকিয়ে থাকে যখন বাংলাদেশ টিম খেলে, বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার জন্য বসে থাকে। ওই দায়িত্ব আমার কাছে সবসময় ছিল এবং এটার গুরুত্ব আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি। যে আবেগটা মানুষ নিয়ে বসত খেলা দেখতে। সে জায়গা থেকে আমি এতোটুকু বলতে পারি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিটা বলতে পারব না।   

প্রশ্ন: সবকিছু মিলে আপনার তৃপ্তি কতোটা? আর এই ঘোষণার মধ্যে আপনার কোনো অভিমান আছে কি না?

মাশরাফি: আপনারা সবসময় যদি এগুলো বের করতে চান তাহলে খারাপ। আমি অনেক আগেই বলেছি যে অভিমান বা রাগ করা বা ক্ষোভ দেখানো...(হাসি) আমি আসলে কার ওপরইবা দেখাবো? এসব জিনিস থাকে না তা নয়, অনেকের থাকে, বলতে পারে। কিন্তু সামনের পরে এরকম বলার আসলে কিছু নেই প্রথমত। আর সত্যি কথা। অনেস্টলি বলছি। এরকম কিছু না। আমাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আপনাদের সামনে এসে ঘোষণা দিলাম যে আমার ওটা শেষ। কিন্তু এর ভেতরে যা হয়েছে মানা না মানা, ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়েই তো এগিয়ে আসতে হয়েছে এই পর্যন্ত। তাই আমি নিশ্চিত যে আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি তাহলে আমাকেও ওনারা বলেছেন...না ঠিক আছে, সামনের ম্যাচে ঠিক করতে হবে। আমার যদি কিছু খারাপ লেগে থাকে আমিও সেভাবে বাদ দিয়েছি। সবকিছুর সমন্বয় করে এভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে হয় আর কি।

প্রশ্ন: এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আপনি কতোটা আলোচনা করেছেন? এখন আপনার বর্তমান অবস্থায় শুধু খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চাওয়া আপনার জন্য কতোটা চ্যালেঞ্জিং?

মাশরাফি: প্রথমত হচ্ছে যে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন। খুব সুন্দরভাবে আপনার সামনে নাস্তা রাখা হলো।  আপনি আবার বিছানায় শুয়ে থাকলেন, টিভি দেখলেন। দুপুরে খাবারটা রাখা হলো। বিকেলে একটু ঘুরে আসলেন। সন্ধায় আবার নাস্তা দেওয়া হলো, রাতে ডিনার। তাহলে আপনার জীবনের মূল্যটা কি থাকল? কিছুই থাকল না। তো একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকটা কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমি উপভোগ করি সব যখন বিপক্ষে থাকে তখন। এটাই আমার জীবনের উপভোগ্য অধ্যায়। এবং আমি বিশ্বাস করি সবকিছু যখন পক্ষে থাকে তখন আমার কাছে মনে হয় জীবনের মূল্য কিছুই না। সবকিছু যখন আপনার বিরুদ্ধে থাকবে তখন আপনি কতোটা সামনে যেতে পারেন, আপনি নিজেকে স্বার্থকতায়, চ্যালেঞ্জের জায়গায় আনতে পারবেন যে ‘ওকে, আমি এটা করে ফেললাম’। এবং সেটা আপনার পরিবার বা আপনার সঙ্গে যারা থাকে তাদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। খুব আরামে জীবন যাপনের বদলে।

আরেকটা কথা যেটা তা হলো পরিবার হয়তো এমন টেকনিক্যাল সিদ্ধান্তের ব্যাপার ততোটা বোঝে না। তাদের ভালো লাগারা জায়গা সবসময় থাকে যে ছেলে ভালো করছে। পরিবারের কেউ ভালো করছে। খারাপও লাগে এইভাবে যে তার খারাপ যাচ্ছে, মানুষ সমালোচনা করছে। তখন তাদের খারাপ লাগে। আমি শুধু বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যে ‘ডান’। তারা শক্তভাবেই আমার পাশে আছে। যেমন টি-টোয়েন্টি থেকে যাওয়ার সময়ও তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। তারা ঠিক সেইভাবে আমার পাশে আছে।

প্রশ্ন: যদিও আজ আর সেই আবহ নেই তারপরও যদি আগামী কালের ম্যাচ নিয়ে যদি একটু বলেন।

মাশরাফি: (হাসি) কেন? আবহ থাকবে না কেন?কালকের ম্যাচ খেলতে হবে না?

প্রশ্ন: খেলতে হবে। প্রধান নির্বাচক আমাদের ধারণা দিয়ে দিয়েছেন মুশফিক কালকের ম্যাচে থাকছেন না। যদিও পাকিস্তানে এক মাস পর ম্যাচ। এতো পরের কথা ভেবে এই ম্যাচে মুশফিককে বিশ্রাম দেওয়া কি দরকার ছিল?

মাশরাফি: দেখেন, এগুলো কিন্তু ছোটোখাটো টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত। এগুলো আসলে ক্যাপ্টেনও দিতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মুশফিক এমন একজন খেলোয়াড় কখনো যদি ব্যাড প্যাচও যায় তারপরও যে পরিমান রান সে করেছে, বাংলাদেশের জেতার পেছনে তার অবদান এসব চিন্তা করতে হবে। এখনো চার নম্বরে আমি নিশ্চিত আপনারা যারা ঘাটাঘাটি করেন তারা জানেন যে নাম্বার ফোরে এখন সে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়। সবকিছু যদি বিবেচনার জায়গায় আনেন তাহলে যে ছেলেটা পারফর্ম করে আসছে, ১২/১৩ বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে, সে যাতে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে না থাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত তা একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত খেয়াল রাখা উচিৎ বরে আমি করি।

তবে এই যে প্রক্রিয়া সেটি যদি মুশফিকের সঙ্গে নরমভাবে আলোচনা করা হয়, মুশফিককে যদি বোঝানো সম্ভব হয় যে এটা হচ্ছে আমার প্রক্রিয়া তোমার ধারণাটা কি? তখন যদি দুই পক্ষ একটা জায়গায় আসতে পারে তখন জিনিসটা আমার কাছে মনে হয় আলোচনার বিষয় না। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে মুশফিকের সঙ্গে আলোচনা করা বা বোর্ড থেকে একটা ভালো ও যথাযথ সিদ্ধান্তে আসা যেটায় মুশফিকও মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকবে এবং বোর্ডেরও পরিকল্পনা সফল হবে। সেই জায়গাটায় আসতে পারলে আমি মনে করি ঠিক আছে।

প্রশ্ন: আপনাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে সবসময় মিস করবে বাংলাদেশ। বাজে একটা অবস্থা থেকে দলকে অসাধারণ জায়গায় তুলে নিয়ে গেছেন। নেতৃত্বের এই সময়কালে আপনাকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দেয় কি?

মাশরাফি: অবশ্যই অনেক ভালো স্মৃতি আছে। অনেক। অধিনায়ক হিসেবে, এই দলের সদস্য হিসেবে। তবে নেতৃত্ব যখন পাই তখন থেকে এই পর্যন্ত তো একটা অধ্যায়। সেই হিসেবে ভালো স্মৃতিও আছে। খারাপ স্মৃতিও আছে। যেগুলো আমরা খেলোয়াড়রা বহন করেছি এক সাথে। আমার পাশে সবসময় খেলোয়াড়রা ছিল। সাপোর্ট দিয়েছে। কোচরা ছিলেন। আলাদা করা খুব কঠিন। এমন অনেক মুহূর্ত আছে যে সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল অনেক কঠিন বা অবিশ্বাস্য, হবে কি না। তারপরও হয়েছে। এমনও কিছু আছে যা কেউ চিন্তা করছে না। ভাবছে বাংলাদেশ দল এটা পারবে। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। দুই জায়গায়ই আছে।

প্রশ্ন: একজন অধিনায়কের চলে যাওয়ার সময়ও কারো কাছে দায়িত্বটা রেখে যাওয়া ভালো লাগার হয়। কার কাছে আপনার এই নেতৃত্বের দায়িত্বটা গেলে আপনার সবচেয়ে বেশি লাগতো বা কার কাছে রেখে যেতে চান?

মাশরাফি: দেখেন, এটা খেলোয়াড়ের সিদ্ধান্ত না প্রথমত। এটা অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত। যখন মুশফিকের হাত থেকে আমি পেয়েছিলাম তখন মুশফিককে এই প্রশ্ন করা হয়নি অবশ্যই। কারণ, সেটা মুশফিকেরও হাতে না। এখন আমি যাচ্ছি। আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড় আছে। তাদের অবশ্যই সামর্থ আছে। তাদের কারো সঙ্গে কথা বলে যাকে মনে হয় দিলে ভালো হয়, স্টেক ওপরে যাবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যদি আনা হয় তাহলে সেটাই দলের জন্য ভালো। এই মুহূর্তে যারা সিনিয়র আছেন আমি মনে করি তারা সবাই সামর্থ রাখেন। আগে-পরে তারা করেছেও। এখন দেখার বিসয় কাকে দেয় বিসিবি। সেটা বিসিবির ব্যাপার আসলে।

প্রশ্ন: যতদিন না সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসছেন ততদিন কি তরুণ কাউকে দায়িত্বটা দিয়ে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন?

মাশরাফি: ডিপেন্ডস। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি চান তাহলে অনেকটা (হার্শ) কঠোর হতে পারে। আমি আগেও একদিন বলেছিলাম একজন তরুণ খেলোয়াড় যখন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে নামে তখন সেটাই তার জন্য অনেক বড় চাপ। আগের মতো ক্রিকেট এখন আর নেই। মানুষ তাকিয়ে থাকে, মিডিয়া তাকিয়ে থাকে। ক্যামেরা থাকে। পারফর্ম কেমন করছে। এত কিছুর ওপর সে ক্যাপ্টেন্সি করবে। এটা ডিপেন্ড করে। ক্রিকেট বোর্ড বা কোচিং স্টাফদের যদি মনে হয় যে এ (তরুণ) অতটুকু চাপ সামলানোর মতো তাহলে কেন নয়? কিন্তু আমার মনে হয় অনেক বেশি ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। কারণ ১২/১৩/১৪ বছর যারা পার করেছে তারা কিন্তু আপনাদের সামলানো কিছুটা হলেও জানে। বাইরের চাপগুলো নিতে পারে। ডিপেন্ডস যে সবাই কি ভাবছে। তবে যারা (ক্যাপ্টেন্সি) করেছে তাদের পক্ষে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। বাকিটা তো ক্রিকেট বোর্ড দেখবে।

প্রশ্ন: নেতৃত্ব পাওয়ার পর আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটা ছিল বলে মনে হয়?

মাশরাফি: সবচেয়ে কষ্টের ছিল তখন যখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে ১ রানে হারলাম। ওয়ার্ল্ড কাপে। সেই রাতটা আমি না শুধু আমাদের পুরো দলের জন্য বিভৎস ছিল। আমরা সবাই হোটেলে এসে করিডোরে বসে ছিলাম। ক্যা্পটেন হিসেবে খেলোয়াড়দের দেখে খুবই খারাপ লাগছিল। তার পরও অনেক চ্যালেঞ্জিং সময় গেছে। শেষ বিশ্বকাপও অবশ্যই। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা টুর্নামেন্টে টিকে ছিলাম। শেষে পর্যন্ত এসে যেভাবে আসা অবশ্যই ওটাও কঠিন ছিল। এবং যা বললাম। ক্যাপ্টেন হিসেবে যে থাকে সে পরিকল্পনা করে ম্যাচ জেতার জন্য। সেটা না হওয়া মানে বাংলাদেশের যে কোনো ম্যাচে হারাই অধিনায়কের জন্য কঠিন সময়। ব্যক্তিগতভাবে বলব প্রত্যেকটা হারই আমার জন্য কঠিন ছিল।

বিশ্বকাপ থেকে এই পর্যন্ত যাত্রাটা কেমন ছিল?

মাশরাফি: আমি আগেই বলেছি। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর রাত পর্যন্ত কোনো আরামের জায়গায় গেলে… চ্যালেঞ্জটা অবশ্যই কঠিন। কঠিন, অবশ্যই কঠিন। কিন্তু আমি এটাকে ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। তবে আোর মতে গীবত শব্দটা কোনো অপশন হতে পারে না। আমরা এটা মুখে বলি। আসলে কাজে কেউ প্রমাণ করতে চাই না। কঠিন সময় যেতে পারে, তারচেয়েও কঠিন সময় আসতে পারে। গিভ আপ করা একটা জিনিস আর না করা একটা জিনিস।

আপনি বললেন এই সিদ্ধান্তটা আপনি নিজেই নিয়েছেন। অবশ্যই এটা একটা স্বস্তির জায়গা যে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছেন। কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারে একটা সময় ছিল ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টির ক্যাপটেন্সি ছাড়াটা কিংবা খেলা ছাড়াটা আপনার জন্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা কিনা?

আপনাদের সামনে এসে আমার জীবনে যা হয়েছে বা কে কি বলাবলি হয়েছে বা কাউকে দোষারোপ করা এগুলো আমার বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে না। আমি একটু ঘুরিয়ে বলতে পারি যে, অবশ্যই কঠিন সময়ে সিদ্ধান্তটা নেওয়া। সেটার জন্য আমি মনে করি একটা মানুষকে ন্যূনতম সময় দেওয়া উচিত। আমি নিশ্চিত এটার সঙ্গে যে কেউ রাজি হবে। কারণ আপনি যখন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৫ বছর ধরে আছেন। এক-দুই বছরের ব্যাপার না বা খেলাটা আমি ২০ বছর ধরে খেলি। সবসময় বলে থাকি খেলাটা আমার লাইফ  না। কিন্তু এটা আমার লাইফের সবচেয়ে বড় অংশ। আজকে আমি এখানে আছি তাও খেলার জন্য। জীবনের সর্বোচ্চ কিছু যা অর্জন করেছি তাও খেলার জন্য। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। তো এখানে একটা সিদ্ধান্ত আমাকে বা যে কোনো কাউকে যে ৫ দিন খেলেছে, তাকেও যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে একটা ন্যূনতম সময় আপনাকে দিতেই হবে। অবশ্যই সিদ্ধান্তগুলো কঠিন। আমি আপনাকে এভাবেই বলব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকের মর্যাদা আপানারা পান? রাষ্ট্রীয় একটা সম্মান থাকে এটা কতটা মিস করবেন? আপনি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের অধিকায়ত্ব করেছেন, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ, এখানে প্রতিটা মানুষ ক্রিকেটের জন্য পাগল। প্রতিটা মানুষ ভুল ধরে, মানুষ মনে করে মাশরাফি এই বলটা এভাবে না করে ওভাবে করলে ভালো হতো। বা এই শটটা না খেলে ওই শটটা খেললে ভালো হতো। এমন একটা দেশ যেখানে বোর্ড সবকিছুতে বিশেষ করে টেকনিকাল বিষয়ে বোর্ডকে সন্তুষ্ট রাখার একটা বিষয় থাকে এদের সাথে অপনার সময়টা কীভাবে কেটেছে বা চ্যালেঞ্জটা কীভাবে মোকাবেলা করেছেন?

মাশরাফি: আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তরটা আমি এভাবে দেব, যেভাবেই হোক আমাকে তারা সহযোগিতা করেছে। আর যে কঠিন প্রক্রিয়ার কথা আপনি বললেন অস্বীকার করার কোনো সুযোগই নেই। এখন যদি মাইকটা সরিয়ে দেন হয়তো বলতে…যেটা সত্যি কথা। এটাও সত্যি কথা সহযোগিতাও ভালো সময়ে করে না সোটও না। আপনি যখন ভালো করতে থাকবেন তখন আস্থার একটা সময় পর্যন্ত আস্থা দেখাবে সবাই। কিন্তু আমি একজন মানুষ হিসেবে, অন্য খেলোয়ারাও তাই ভাববে। এটা আসলে অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আমরা যখন মাঠে নামি। কীসের জন্য, বাংলাদেশ নামটার জন্য নামি। যখন আমার ভুল ধরা হয়, তখন আমি স্বাভাবিকভাবে সেটা করতে পারি না। তখন মনে হয় ভুলই করেছিলাম। এটা যদি আমার পারিবারিক সিদ্ধান্ত হতো, যে আমি পরিবারের জন্য মাঠে নামছি। তাহলে হয়তো আমি তর্ক করতে পারব। কিন্তু নামটা যখন বাংলাদেশের নামে তখন তর্কের জায়গাটা থাকে না। কারণ এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। সবার আবেগ জড়িয়ে আছে, মর্যাদা আছে এটা আসলে ফেলে দেওয়ার সুযোগ থাকে না। দিন শেষে যে বা যারা আমরা খেলোয়াড়রা কাজটা করি, তাদেরকেই মাথা নত করে থাকতে হয়। আবার একটা জিনিস দেখবেন যে আলোচনা-সমালোচনা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে হয়। আমাদের ছোট ভাইরা যারা অনূর্ধ্ব-১৯ ওরা বিশ্বকাপ জিতে আসল। এরা কি কেউ আপনার সামনে বা মিডিয়ার সামনে বা অন্য কাউকে বলেছে যে আমি খুব বড় কিছু করে ফেলেছি? এরা বাচ্চা ছেলে। এরা একজনও কি বলেছে? আপনি দেখবেন ওদের ন্যাশনাল টিম হবে বা অনূর্ধ্ব ১৯ আরেকটা টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ হবে, ব্যর্থ হলে হয়তো বা এই আলোচনা শুরু হয়ে যাবে যে, এরকম হয়ে গেছিল এজন্য এটা হইছে। তো কী দরকার…

প্লেয়াররা তো চায়না আপনারা আমাদের খুব বড় করে ফেলেন। প্লেয়াররা চায় না যে আমার বাবা-মা কাছে যেয়ে আপনারা কিংবা আপনাদের কেউ টানে না, আসলে আপনারা আমার বাবা মায়ের সাক্ষাতকার নেন। এগুলো আপনারা বলেন মানুষজনও দেখে। এরপর ওইভাবেই রিঅ্যাকশন দিয়ে দেয়। এভাবে সমস্তই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে খেলোয়াড়কে যেতে হয়। সবকিছু যাওয়ার পর এইভাবে খেলোয়াড়কে খুব পয়েন্ট আউট করে না খেলোয়াড়দের নিয়ে। তারপরও খেলোয়াড়কে ওইসব কিছু মেনে নিতেই হবে। এটাই প্রক্রিয়া। আমি মনে করে এসব ক্ষেত্রে আমাদের পরিবারের অনেক দায়িত্ব আছে। এখন ছেলের ভালো সময়, খুব স্বাভাবিক সবাই আছে। যখন খারাপ সময় আসে তখন এই জিনিসগুলোই উল্টে যাবে। সেহেতু তাসকিনের ‍উদাহরন দিতে পারি, যখন অভিষেক ম্যাচে ৫  উইকেট পেয়েছে তখন আর এখন তার ক্রিকেট?। তখন পরিবারেরও অনেক দায়-দায়িত্ব থাকে।

ক্যাপটেন্সি যখন শুরু করেছি তখন ওটা ফিল করিনি। যখন ক্যাপটেন হয়েছি তখনও এটা ফিল করিনি। আবার এখন আমার আরেকটা পরিচয় এমপি; এটাও ফিল করি না। কোট নেইনি, বাড়ি নেইনি, গাড়ি নেইনি, আমি আসলে এসব থেকে সবসময়ই দূরে থাকতেই পছন্দ করেছি। এবং দূরে থাকাটা ভালো মনে করি। আমি যখন এই চেয়ারটা যখন পেয়েছি, একজন ক্যাপটেন তার আগ পর্যন্ত আমার সম্ভাব্য সবকিছুই ছিল এই চেয়ারটা পাওয়ার মতো। ভালো যা কিছু করতে থাকবো আর এই চেয়ারটা আমার কাছে আসতে থাকবে। যখনই আমি এই চেয়ারটা পেলাম। তখনই ওখানে শেষ লেখা হয়েছে। এই চেয়ার পাওয়ার আকাঙ্খা আমার কাছে নাই। এই চেয়ারটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ আমার করচি উচিত। বরংচ এটার প্রভাবটা আমি অন্যভাবে খাটাতে চাই না। আমি জিনিসটা এভাবে দেখি, যে জিনিসটা আমি অর্জন করব বা অর্জন করতে যাচ্ছি। তা পাওয়ার পর ওটার মূল্য আর নাই। তখন সেটার মূল্যায়ন হবে আমি কীভাবে এটার প্রয়োগ করেছি।

প্রশ্ন: এখান থেকে আপনার পরিকল্পনা কী? বিসিবিতে কোচের বা আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ক্রিকেটকে আলো হেল্প করার বা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মাশরাফি: আমি সবসময়ই বলি আমি যা আজ যাকিছু তা সবকিছু ক্রিকেট দিয়ে। ক্রিকেট খেলা যদি শেষ না করতাম তাহলে মাছের ব্যবসা করতে পারতাম। পারিবারিক ব্যবসা তো আছে…ঘের আছে সেটাই হয়তো আমাকে ওভাবে চলে আসতে হতো। আমি যা কিছু হয়েছি এই ক্রিকেট দিয়েই হয়েছি। এবং সামনে আমার যতো পরিকল্পনা অবশ্যই তার প্রধান ক্রিকেট। অবশ্যই আমাকে আমার এলাকার যা কাজ আছে করতে হবে। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আমাকে এট করতে হবে। এখন থেকে অবশ্যই আমি পিছু সরব না। আর ক্রিকেট টা তো আমার রক্তের ভেতরে। যদি খেলোয়াড়রা কখনো ব্যক্তিগতভাবে মনে করে আমাকে যে কোনো জায়গায় যে কোনা সময় আমাকে প্রয়োজন অবশ্যই আমি থাকব। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: আপনি যেহেতু বললেন এমপি, এ কারণেই প্রশ্নটা করা, আপনি এই সিদ্ধান্তটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কিনা?

মাশরাফি: আসলে প্রধানমন্ত্রী খেলাটাকে পছন্দ করেন অনেক। আপনারাও দেখেছেন সবসময়। প্রধানমন্ত্রী খেলার খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু দেশের এতকিছুর দায়িত্বের ভেতরে থেকে এসব ছোটখাটো বিষয় বা ওনার কাছে যাওয়া ডিস্টার্ব করা আমার কাছে মনে হয় না প্রয়োজন আছে। তারপরও কোনোনা কোনেভাবে তিনি এটা জানেনঅ আমি আশা করছি সবাই আমাকে সমর্থন করেছেন। তিনিও করেছেন। এগুলোর ব্যাখ্যা আমি আগেই দিয়েছি। এই সিটটা যখন আমি পেয়েছিলাম তখন এটার শেষ লেখা হয়ে গেছে। তার আগ পর্যন্ত এই সিটটার জন্য সবকিছু উন্মুক্ত ছিল।

 
প্রশ্ন: আপনার সতীর্থ এবং বন্ধুদের জন্য কী বলবেন?

মাশরাফি: দেখুন বাংলার প্রত্যেকটা মানুষকে আমি যেভাবে সম্মান করি ভালোবাসি, এর মাত্রা এবং আমার সতীর্থ প্রত্যেকেই আমার পরিবারের অংশ। আমি নিশ্চিত তাদের জায়গায় আমিও তাই। তাতেদর প্রতি আমার সম্মান এবং শ্রদ্ধা সবসময় ছিল থাকবে এবং আছে শুভ কামনা এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

প্রশ্ন: কালকের ম্যাচ নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আপনার ভাবনা…

মাশরাফি: একাদশ নিয়ে সত্যি কথা এত তাড়াতাড়ি আলোচনা হয় না। এটা আপনারাও জানেন। জয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাইলস্টোন এত গুরুত্বপূর্ণ না জয়ের চেয়ে। বাংলাদেশের জয়টা যে কারোর মাইফলকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: কোচের সঙ্গে কথা হয়েছি কিনা

মাশরাফি: দেখেন কোচের সঙ্গে আমার এমন কোনো কথা হয়নি। এই প্রক্রিয়ায় ছয় মাসের বেশি সময় হয়েছে; তারও নিজস্ব একটা পরিকল্পনা হয়েছে। আমি মনে করি তার পরিকল্পনাটা উন্মূক্ত হওয়া ভালো। এক সপ্তাহ আমি তার সাথে আছি। এ সময় তার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করিনি। সেটাও হতে পারে তার নিজস্ব একটা চিন্তা ভাবনা আছে। আমি মনে করি এটা উন্মুক্ত করে দেওয়ার ভালো সময় এটা। সে যদি আমার সাথে অলোচনা করতো হয় তো বা তাহলৈ আমি হয়তো আপনাদের বলতে পারতাম। সে আমার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করেনি। কাজেই আমার মনে হয় না তার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করার কোনো কিছু আছে।

একটা বিষয় আছে আমি বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। পাপন ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেই এসেছি। যিনি আমাকে এই সিটা দিয়েছেন, আমি মনে করি  তার সাথে অলোচনা করাটাই বেপ্যারা। আসলে পেশাগত বিষয়ে মুখে বলা এক জিনিস কাজে করা আরেক জিনিস। যখন একটা খেলোয়াড়ের খারাপ সময় যায়। তখন পেশাদরাত্বি এমন কঠিন আকার ধারণ করেন যে, আমরা প্রেত্যেকটা সিদ্ধান্ত পেষাগত জায়গা থেকে নিতে পারি। প্রত্যেকটা জায়গা আপনি দেখনে পেশারারিত্বের চূড়ান্ত জায়গায় যেভাবে বলে সেভাবে কাজ নাই। এটা কিন্তু বিসিবিকে বলছি না, একটা কোচ যখন নতুন আসে সে তার এক্সপেরিমেন্ট করে। আমাদের তার প্রতি একটা ধারনা থাকা উচিত। তাকে দেওয়া উচিৎ।  ধরেন মুশফিককে কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন? এখন মুশফিককে নিয়ে যদি জোকিংয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যান। তাহলে আমাদের কি অ্যাসেট যা নিয়ে আমরা নাড়াচাড়া করছি। মুশফিক কতদিন আর খেলবে। ওকেও আমাদের পেশাদারিত্বের বিষয় ওটাও ওর সাথে আলোচনা করতে হবে। তুমি এটা ঠিক করছো না। আমি মুশফিক বললাম, অসলে সবার কথাই বলছি। তাকে সর্বোচ্চটা সম্ম্মান বা তার কাছ থেকে সেরাটা নিয়ে আসতে যে পক্রিয়া আছে সেটািই কঠিন লাগে। এটা আমরা যে শুধু বলি না বিসিবি আমাদের প্লেয়ারেরও দায়িত্ব আছে, টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব আছে বোর্ডের দায়িত্ব আছে। ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব আছে। এমন না যে দুই বছর পরপর এতকজন কোচ আনলাম তার মতো করে এক্সপরিমেন্টে করে সে তার মতো চলে গেলো। কিন্তু আমাদরে সবার ভাবতে হবে এ দেশের খেলোয়াড়রাই এ দেশকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। কাজেই এখানে কেউ এসে যদি এক্সপেরিমেন্ট করতে চায় এবং সেটা যদি মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে তাহলে তাকে সর্বোচচ সহযোগিতা করা উচিত। আর যদি দার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে অব্যশ্যই থামানো উচিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত