নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুন, ২০২০ ০১:৫৫

ভবঘুরে-পথশিশু-যৌনকর্মীদের প্রতিদিনের খাবার দেন তারা

সিলেট নগরীর কিনব্রিজ এলাকা ঘিরে তাদের বসবাস। এদের কেউ মাদকসেবী, কেউ যৌনকর্মী, কেউবা ভবঘুরে আবার পথশিশুও আছে অনেকে। এই এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত তারা। কিনব্রিজের নিচেই তাদের রাত্রিযাপন। সমাজের মূলধারায় তারা অবাঞ্ছিত। ভদ্রজনেরা দেখে নাক সিটকান, মুখ ফিরিয়ে নেন।

এইসব 'অবাঞ্ছিত' মানুষদের অপরাধমূলক কাজ থেকে সরিয়ে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা), সিলেট। ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রতি।

এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে কিনব্রিজ এলাকার বাসিন্দাদের বিনামূল্যে রাতের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। গত ৯ মে থেকে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এরপপর টানা দেড় মাস ধরে চলছে খাবার বিতরণের কাজ। নগরীর মদনমোহন কলেজে রান্না করে কিনব্রিজের পাশে সুরমা তীরে প্রতিরাতে খাওয়ানো হয় তাদের। প্রখমদিকে ৫০-৬০ জনকে খাবার দেওয়া হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে। সবাই একসাথে খাবারের সময় যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে তাই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গোল বৃত্ত এঁকে দেওয়া হয়েছে।

ইমজা'র এই মানবিক উদ্যোগে সেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে। নানাবিধ সহায়তা দিয়ে তারা শামিল হয়েছেন এই কর্মযজ্ঞে।

খাবার প্রদানের পাশপাশি অপরাধমূলক কাজ থেকে সরে আসতেও তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে সফলতা মিলছে বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

বিজ্ঞাপন



এই উদ্যোগে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ইমজা'র সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবির। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে আরও অনেকের মতো কিনব্রিজ এলাকায় বসবাস করা মানুষগুলোও বিপাকে পড়েছে। এদের অনেকেই কেবল খাবারের ব্যবস্থা করতে এই অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে। এখন যখন সবখানেই সঙ্কট, তখন খাবার না পেলে তারা আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। এতে নগরীর এই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। এসব ভাবনা থেকেই আমরা মূলত এ উদ্যোগ নিই।

তিনি বলেন, এদের অনেকেই কেবল খাবারের নিশ্চয়তা পেয়ে গেলে অপরাধমূলক কাজ থেকে সরে আসবে। তার কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে আমরা পেতে শুরু করেছি। এখন আস্তে আস্তে সমাজের মূলস্রোতে তাদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তাদের কিছু ভালো কাজে যুক্ত করারও চেষ্টা করছি। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের দিয়ে কিনব্রিজ এলাকা পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হচ্ছে। আস্তে আস্তে এর পরিধি বাড়ানো হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। এইসব ভবঘুরে লোকদের কোনো কাজে লাগানো যায় কি না এ ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।

আশরাফুল কবির বলেন, প্রথম এক মাস ইমজার সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই কার্যক্রম চালিয়েছেন। এখন খবর পেয়ে অনেকেই সহায়তা নিয়ে আসছেন। এমনও হয়েছে একদিন একজন তার বাবার শিরনির পুরো খাবার আমাদের দিয়ে দিয়েছেন।

প্রতিদিন খাবার পেয়ে অনেকে খারাপ কাজ ছেড়ে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে একটা শিশু আছে যে ইয়াবা বিক্রি করতো। নিজেও এটি সেবন করতো। এখন সে এইসব কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আরও দুএকজন আছে এমন। এভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে।

এ ব্যাপারে ইমজা'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজু বলেন, কিনব্রিজ এলাকার সুবিধাবঞ্চিত, ভাসমান মানুষগুলো যারা সমাজের চোখে অবাঞ্চিত তাদের পুণবার্সনের একটি উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। তাদের আলোর পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

একবেলা খাবার বিতরণের মাধ্যমে এই উদ্যোগের শুরু হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালাবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত