মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

১৭ মার্চ, ২০২১ ২২:২৭

এমন তাণ্ডব আমরা জীবনে দেখিনি

শাল্লার হামলায় ঘটনায় আক্রান্তদের বর্ণনা

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে মামুনুল হকের আনুসারীরা যখন হামলা চালায় তখন প্রাণ বাঁচাতে হাওরে আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্রামের নারী-পুরুষেরা। এসময় ধানেক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে নিজেদের ঘরে চালানো তাণ্ডব দেখেছেন তারা।

ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুধবার সকালে এ হামলা চালিয়ে গ্রামের প্রায় ৮০টি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

বুধবার ঘটনাস্থল নোয়াগাঁও গ্রামের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, গ্রামের পাশেই ধারাইন নদী পেরিয়ে অতর্কিত হামলা চালানোয় নিজের ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের বান্দাবিল হাওরেই লুকিয়ে নিজেদের প্রাণে বেঁচেছেন। না হলে ঘরবাড়িকে যেভাবে লাঠি দা রামদা দিয়ে কুপিয়েছে সেভাবে তাদেরও কুপাতো।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সংগীত শিক্ষক দেবন্দ্র কুমার দাস বলেন, আমি দেখছি হাজার হাজার মানুষ নদী পার ওইরো আমরা ছেলেমেয়েরা দৌড়াইয়া জান বাঁচানির লাগি হাওর দৌড় দিচ্ছে। পরে আমরার ঘর ডুকিয়া সোনাদানা টাকা পয়সা সব নিছেগি আমরার কিচ্ছু করার আছিল না আমরা জীবন বাঁচানির লাগি হাওরও আশ্রয় নিছি।

তিনি কেঁদে আরও বলেন, আমার ছেলে গতকাল ঋণ আনছিলো ৫০ হাজার টাকা কিন্তু রইয়া গেছিলো ৩ ভরি সোনা নিছে চেয়ার টেবিল ভাঙছে আমার শখের হারমনিও ভাঙছে। আমি শ্বাসকষ্টের রোগী এখন যে ওষুধটাও খাইমু এই টাকা নাই।

বাসিন্দা রাকেশ রঞ্জন দাশ বলেন, আমার তিনটি সোনার চেইন নগদ ৪০ হাজার টাকা আর চেয়ার ভাঙিয়া দিয়া গেছে, আমরা ঘরের সবকিছু শেষ আমরা কি দোষ করছি, যেসময় হামলা করছিল আমরা সবাই হাওর গিয়া লুকাইছি।

একই গ্রামের বাসিন্দা লিটন চন্দ্র দাশ বলেন, হামলার সময় সবাই হাওর গিয়া আশ্রয় লইছে আমি ও আমার পরিবার ও ছোট বাচ্চারে নিয়া হাওরও লুকাইছি পরে ঘর আইয়া দেখি ঘরের অবস্থা নাই তিনটা আংটি আছিল নিয়া গেছে তারা।

স্বপন চন্দ্র দাস বলেন,  জানটা নিয়া আর ঘরোর শিয়ান মেয়ে ক্লাস সেভেনও পড়ে তারে নিয়া হাওরও লোকাইছি ঘরের দলিলপত্র নিয়া গেছে। এমন তাণ্ডব আমরা জীবনে দেখি নাই।

হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বলেন, হামলাকারীরা আমার ঘরের জিনিসপত্র সোনাদান লইয়া গেছে। তারা লাঠি দা নিয়া আইছে। আমরা পরিবারের সবরে নিয়া হাওরও গিয়া লুকাইছি জীবনটা তো আগে।

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুর্ণবাসনের জন্য সহযোগিতা করা হবে বলে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এমন ঘটনায় আমরা দোষীদের খোঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং গ্রামের যে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আমরা পুরোপুরি সহযোগিতা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত