সনেট দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল

১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ১৩:৪২

সরকারি মার্কা লাগিয়ে গাছ পাচার, শ্রীমঙ্গলে বিপুল পরিমাণ গাছ আটক

বন বিভাগ গাছ কর্তন করে বিক্রয় করার অনুমতির প্রদানের যে হেমার দিতে হয় সেগুলো দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে কর্তণ করা  গাছে। এরকম অভিযোগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংবাদ পেয়ে গত ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১১ঘটিকা থেকে বিকেল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের নায়েব সুবেদার মোঃ: মোশারফ হোসেন, হাবিলদার মোঃ: বকুল সরকার এবং বন্যপ্রাণী বিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান, রেঞ্জ কর্মকর্তা সাহেব আলী মিয়া এর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণের গাছ আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের সাওয়ন ছড়া গ্রামের খসরু চৌধুরীর বাড়ির সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে। আটক হওয়া গাছ গুলোতে দেখা গেছে গাছ বিক্রয় করার বন বিভাগের সরকারী হেমার বা মার্কা দেওয়া। এসময় গাছগুলোর কোন মালিক পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে বিজিবি’র ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ কালীঘাট বিওপি এলাকায় অবস্থিত হোসেনাবাদ চা বাগান সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপর থেকে আরো অনেক গাছ আটক করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের সূত্রটি জানা যায়, হোসনাবাদ চা বাগান সংলগ্ন জনৈক ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপর গাছ কর্তন করার জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে বন বিভাগ গাছ কর্তনের অনুমতি প্রদান করে। গাছ কর্তন করার পর বিক্রয়ের জন্য মার্কা বা হেমার প্রদানের সময় শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ অফিসার মোঃ: ফিরোজ আলমসহ বন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। ঐ সব গাছগুলো সঠিক মালিকের জায়গার কিনা তার যাচাই না করে তার বিক্রয় করার মার্কা বা হেমার প্রদান করেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাটির পাশে সরকারী জায়গা বা বাংলাদেশ চা গবেষণা বোর্ডের অধীনে বিলাশছড়া চা বাগানের সীমানা।

এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ আসে যে, সেখানে যে গাছ কর্তনের জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছিল সেই গাছগুলোর সাথে পার্শ্ববর্তী অন্য মালিকের গাছও কাটা হয়েছে। বন বিভাগের কাছে আবেদন করা সেই আবেদন পত্রটিও আসে এ প্রতিবেদকের কাছে। আবেদন পত্রটিতে দেখা গেছে বাগানটিতে আকাশমণি, ম্যানজিয়াম, রঙ্গি, বেরেঙ্গা প্রজাতির গাছ রয়েছে। আবেদন পত্রের সূত্র ধরে সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় যে জায়গার মালিকের গাছ কাটার জন্য আবেদন করা হয়েছে সেই জায়গার পাশাপাশি অন্য মালিকের গাছও কাটা হয়েছে এবং আবেদনে উল্লেখ করা গাছ ছাড়াও অন্য প্রজাতির গাছও কাটা হয়েছে। সেখানে আবেদন পত্রের সাথে কোন মিল নেই। কিন্তু গাছে বন বিভাগে সরকারী মার্কা বা হেমার দেওয়া আছে। লোহা গাছ সাধারণত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও গাছ পাওয়া যায় না। সেখানে লোহা গাছও রয়েছে।

সাধারণত কোন ধরনের গাছ কর্তন করতে গেলে বনবিভাগের অনুমতি নিতে হয়। প্রথম পর্যায়ে আবেদন করতে হয় এর পর বনবিভাগের লোকজন তদন্ত করে দেখেন গাছগুলো সঠিক আছে কিনা। সঠিক থাকলে গাছ কর্তনের অনুমতি প্রদান করেন। তারপর গাছ কর্তন করতে পারবেন। গাছের সংখ্যার উপর নির্ভর করে অনুমতি প্রদান করেন। অনুমতি প্রদানের পর বিক্রয়ের জন্য বন বিভাগ গাছগুলোতে মার্কা বা হেমার দেন।

কিন্তু এখানে দেখা গেছে আবেদন পত্রে উল্লেখ করা গাছগুলো ছাড়াও বিপুল পরিমাণ অবৈধ গাছেও বনবিভাগ সেই মার্কা বা হেমার প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের মধ্যে চলছে তোলপাড়।

এব্যাপারে বন্য প্রাণী বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জের এসিএফ তবিবুর রহমান বলেন, আমি এব্যাপারে আমার বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সেগুন গাছ রিজার্ভ ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু লোহা জাতীয় গাছ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। অবৈধ গাছে বন বিভাগের হেমার দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন এটা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। এব্যাপারে উনারা ব্যবস্থা নিবেন।  

বন্য প্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দে জানান, এব্যাপারে আমি খোজ নিয়ে তদন্ত করে দেখবো। যে দোষী হবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন বিভাগের এসিএফ রাজেশ চাকমা বলেন, বর্তমানে আমি অফিসের বাইরে আছি। অফিসে গিয়ে দেখবো।

অবৈধ গাছে নিজ বিভাগের কর্মকর্তার হেমার বা মার্কা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছিল। আমি যতদুর জানি ওরা জায়গায় গিয়ে তদন্ত করে সঠিক পেয়েছে। কিকি ধরনের গাছ পেয়েছে তা আমার জানা নেই। নিজ কর্মকর্তার মার্কার ব্যাপারে কিছুই জানানি।
এব্যাপারে রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আলম জানান, এখানে আমার কিছু করার নেই। আমরা সঠিক বলে মার্কা দিয়েছি। আটককৃত সর্বমোট পরিমাণ হলো ২৬৩.৫৮ ঘনফুট বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এব্যাপারে মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত