নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ জুলাই, ২০২২ ২২:৪৯

বানবাসী মানুষের পাশে পুলিশ

এখনও তিন থানার সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

গত ২৬ জুন যখন বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট তখন ঢাকায় হাইক ট্যুরিজমের সত্ত্বাধিকারী মো. আসিফুর রহমানের মোবাইলে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রাম থেকে কল করে বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় তাদের এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না। তাই কয়েকদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে আছে ওই গ্রামের ৫/৬টি পরিবার। এই তথ্য পেয়ে আসিফুর কল করেন তার বাল্য বন্ধু সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমানকে।

এই খবর পেয়ে লুৎফর রহমান দ্রুততার সাথে জিপিএস ট্র্যাকিং করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের সাহায্যে ওই পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেওয়া হয়। মো. আসিফুর রহমান বলেন, আমি সিলেটে বাসিন্দা নই। কিন্তু যেকোনো ভাবে ওই মানুষজন আমাকে তাদের সমস্যার কথা জানান। খবর পেয়ে তড়িৎ গতিতে তাদের সাহায্য করে সিলেট পুলিশের সদস্যরা। তাই তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট নগরীসহ প্রায় সবকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। এই সংকটে প্রায় সব শ্রেণী পেশার মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন বানবাসী মানুষের পাশে। তবে সবার আগে পাশে দাঁড়ান সিলেট জেলা পুলিশে কর্মরতরাও। থানার কনস্টেবল থেকে শুরু করে এসপি, ডিআইজি সবাই সবার জায়গা থেকে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন ১১টি থানার মধ্যে ৭টি চিল সম্পূর্ণ প্লাবিত। বাকি চারটির মধ্যে ওসমানীনগর থানা ৯০ শতাংশ, বিয়ানীবাজার থানা ৯০ শতাংশ, ফেঞ্চুগঞ্জ থানা ৮০ শতাংশ, গোলাপগঞ্জ থানা ৬০ শতাংশ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এসব থানা এলাকায় গত ১৭ জুন থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল না, বন্ধ ছিল মোবাইল নেটওয়ার্কও। বন্যার পানিতে বেশিরভাগ এলাকা ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখনও জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার এবং বালাগঞ্জ থানার সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এসব বিপত্তির মধ্যেও এই থানাগুলোতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়েছেন বানবাসী মানুষের পাশে। উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া। পানিবন্দি মানুষকে শুকনো ও রান্না করা খাবারও বিতরণ করছেন সিলেট জেলা পুলিশের সদস্যরা।

সিলেট জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন ১১টি থানার প্রায় ১৮৯৭ টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পুলিশের ১৩টি ট্রলার, ৩টি স্পিডবোটসহ ১৬টি জলযান উদ্ধার কাজে নিয়োজিত চিল। এর মাধ্যমে ৪ হাজার ৮০০ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় থানাগুলো জেনারেটরের মাধ্যমে যোগাযোগ সচল রাখা হয়েছে। বন্যার পানিতে কোম্পানীগঞ্জ থানার নীচতলা সম্পূর্ণ রাস্তা ডুবে যায়, গোয়াইনঘাট থানার নীচতলায় ৫/৬ ফুট পানি এবং বিশ্বনাথ থানার নীচতলা কয়েক ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। এসবের মধ্যেও ২৬ হাজার ২১৫ প্যাকেট শুকনা খাবার  ও প্রায় ৪৭ হাজার ৫৩০ জন লোকের মধ্যে পুলিশ লাইন্স থেকে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান বলেন, এবারের বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গত ১৫ জুন থেকে পানি বৃদ্ধি শুরু। ১৬ জুন থেকে এটা চরম আকারে ধারণ করতে থাকে। সিলেট শহরের সঙ্গে থানাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং থানার সাথে ইউনিয়ন এবং গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। পুলিশের বেতার যোগাযোগ ব্যতীত ৪টি থানার সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৫ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত আমরা পুলিশই ছিলাম প্রথম রেস্পন্ডার। তাই শত প্রতিকূলতার মাঝে আমরা আমাদের সাধ্য মত বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কখনো উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছি কখনো, অভুক্ত মানুষকে খাবার দিয়েছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার এবং বালাগঞ্জ থানা প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্লাবিত। থানাগুলোর সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ওসমানীনগর থানা এলাকার ৮০ শতাংশ এবং গোলাপগঞ্জ থানা এলাকার ৬০ শতাংশ বন্যার পানিতে প্লাবিত। বিভিন্ন উপজেলার ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করছে। আমরা এখনো ত্রাণ তৎপরতাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম নিয়ে বানবাসী মানুষের পাশে আছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত