নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ জুলাই, ২০২২ ১১:৩৭

অনন্ত হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফয়সাল ভারতে গ্রেপ্তার

অনন্ত বিজয় ও ফয়সাল

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জঙ্গি ফয়সাল আহমদকে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের বরতা দিয়ে সেখানকার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ১ জুলাই বেঙ্গালুরুর বোম্মনাহাল্লি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ জুলাই কলকাতায় আনা হয়েছে তাকে।

পুলিশের বরাতে ওই দৈনিকে আরও জানানো হয়, জুনের শুরুতে ভারতে ফয়সালের অবস্থানের তথ্য পান বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এরপর তার মোবাইল নম্বর কলকাতা পুলিশকে দেওয়া হয়। মোবাইল ট্র্যাক করে বেঙ্গালুরুতে ফয়সালকে পায় পুলিশ।


এরআগে গত ৩০ মার্চ সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবক্যুনালে অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার রায়ে ফয়সালসহ ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

আজ বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন ও খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ এবং কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)। এ ছাড়া সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চারজনের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক ছিলেন। এরমধ্যে ফয়সাল ভারতে গ্রেপ্তার হলেন।

তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল জানিয়েছেন, তারই নেতৃত্বে অসমের বরাক উপত্যাকায় আল-কায়দা ঘাঁটি মজবুত করেছে। তিনি আল-কায়দার ছায়া সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে (এবিটি)-র সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ানোর আড়ালে জেহাদি মতাদর্শ ছড়িয়েছেন ফয়সাল।

গ্রেপ্তারের সময় ফয়সালের কাছে যে পাসপোর্ট পায় কলকাতা পুলিশ তাতে রয়েছে কাছাড়-ঘেঁষা মিজোরামের ঠিকানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করেন বেঙ্গালুরু থেকে। ভোটার কার্ড শিলচরের। সেখানে তার পরিচয় শাহিদ মজুমদার।

পুলিশ জানায়, জেহাদি কার্যকলাপের অভিযোগ স্বীকার করে ফয়সাল জানিয়েছেন, ২০১৫ সালেই তিনি শিলচরে পালিয়ে যান। তবে ব্লগার হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে তার দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তাকে এ বার বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে।

আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বরাতে বলা হয়, এবিটি এখন সে দেশে অতীত। কিন্তু অসমে এবিটি সক্রিয় হয়ে ওঠায় চিন্তায় পুলিশ।

অনন্ত হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত