নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুলাই, ২০২২ ১২:৫৬

দিনেই নিস্তব্ধ সেই গাজীকালুর টিলা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা হল থেকে গাজীকালুর টিলার দূরত্ব প্রায় ৩০০ গজ। হলের সামনের সেতু হয়ে সেখানে হেঁটে যেতে লাগে ৭ থেকে ৮ মিনিট। দিনেই ওই এলাকা থাকে নীরব। আর সন্ধ্যার পর হয়ে পড়ে নিস্তব্ধ। শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর আলোচনায় এখন টিলাটি।

পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় টিলার অধিক নির্জন এলাকায় চলে গিয়েছিলেন বুলবুল ও তার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। আর সেই সুযোগটিই কাজে লাগায় ছিনতাইকারীরা।

শাবি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের টিলাটিতে সোমবার এক ছাত্রীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল। সন্ধ্যায় সেখানে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এরপরই ওই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় ওই এলাকা থাকে খুব নীরব। কারও তেমন দেখা মেলে না।

টিলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বছর দশেক আগে এই এলাকায় ছিল জঙ্গল। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর ধীরে ধীরে এখানে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক টিলা কাটা পড়ে। তবে এখনও গাজীকালুর টিলাসহ আশপাশে তিনটি টিলা আছে। দিনেও এখানে সাপ-বিচ্ছুর দেখা মেলে, সন্ধ্যা হলে বাড়ে শিয়ালের গর্জন। রাতে ভূতুড়ে আবহ থাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কিংবা দলবদ্ধ ছাড়া এখান দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে না।

ওই টিলায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ঘণ্টাখানেক টিলার সড়কের পাশে অবস্থান করে মাত্র তিনজনকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

এদিকে, বুলবুল হত্যার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে জবানবন্দি দেন কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হাসান। এরআগের সন্ধ্যায় জবানবন্দি দেন অপর আসামি আবুল হোসেন।

এরআগে বুধবার জালালাবাদ থানায় সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, বুলবুল হত্যায় অন্য কোনো কারণ নেই। নিতান্ত ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। এরপর অধিক রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।

আজবাহার আলী বলেন, সন্ধ্যার পর গাজীকালু এলাকায় ঘুরতে যান বুলবুল ও ওই ছাত্রী। অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকায় তাদের একা পেয়ে আবুল, কামরুল ও হাসান মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। রক্ত দেখে ভয় পেয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে।

প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের কারণে হত্যার সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ঘটনার পর বুলবুলের সঙ্গে থাকা ছাত্রীর হাসপাতাল ত্যাগ এবং কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই ছাত্রী তাদের জানিয়েছেন, বুলবুলের লাশ ক্যাম্পাসে নেওয়া হবে। শেষ দেখার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। এর পেছনে অপরাধমূলক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার কললিস্ট চেক করে গ্রেপ্তারদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত