শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৪৬

কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

‘বিকেলে হঠাৎ করে আকাশ কালো হয়ে এল, বউ-বাচ্চা নিয়ে আমি তখন আমার ঘরেই। একবার হালকা বৃষ্টি এল, বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। কিছুক্ষণ পর শিলাবৃষ্টিও থেমে গেল। ভাবলাম, বৃষ্টি মনে হয় শেষ; কিন্তু তখনই ঘটল ভয়াবহ ঘটনা। হঠাৎ করে বাতাস বাড়তে লাগল। আমরা তখন ঘরের ভেতর। হঠাৎ করেই আমাদের টিনের ঘরের ওপর পরপর দুটি বড় গাছ ভেঙে পড়ল। আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলাম। পরে আমাদের চিৎকার শুনে আশপাশের ঘরবাড়ি থেকে মানুষ এসে আমাদের উদ্ধার করেন। আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় আমরা বেঁচে গেছি।

কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শাপলাবাগ এলাকার বাসিন্দা মিঠু ঘোষ। গত রোববার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর তাণ্ডবে তার মতো অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঝড়ের সময় আতঙ্কে সময় কেটেছে তাদের।

কালবৈশাখীতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। উপজেলার প্রায় ১৭০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে বোরো ধান ও শাকসবজির খেত ও পানজুমের। ঝড়ের কারণে গাছ পড়ে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন বিকেল ৪টা ৪২ মিনিট থেকে ৪টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত ৮৯ কিলোমিটার বেগে এই ঝড় বয়ে যায়। এ সময় ১৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

গতকাল সোমবার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝড়ে উপজেলার প্রায় ১৭০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘরের বেশির ভাগই ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ভেঙে ঘরে পড়ার কারণে। তবে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা করডিট পতমী বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে খাসিয়া পুঞ্জির আটটি পরিবার খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ঘর ভেঙে যাওয়া ও টিনের চাল ফুটো হয়ে যাওয়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের। গাছ ভেঙে ও শিলাবৃষ্টির কারণে পান গাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বলেন, আমরা ঘুরে ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০ পরিবারের খবর পেয়েছি, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নেই বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমি ডিসি মহোদয়কে মৌখিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে ঝড়ের পর থেকে পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িক বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, কালবৈশাখীতে শ্রীমঙ্গলে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে ১০৫টি খুঁটি, প্রায় ১ হাজার ৯৭ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। তারের ওপর গাছ পড়েছে ৩৬৭ স্থানে। ১০টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই আমাদের লোকজন কাজ করে যাচ্ছেন। এই কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৩০ লাখ টাকার জিনিস নষ্ট হয়েছে। আমরা দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজনগর উপজেলা থেকে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের আনা হয়েছে এখানে। আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতি হয়েছে বোরোর ধান ও শাকসবজি খেতের। শ্রীমঙ্গল কৃষি কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২৯৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৮ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত