নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২১:১১

হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা: দোয়ারার সেই গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার

ফেসবুকে কোরআন শরীফ অবমাননার জের

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার একটি গ্রামে ও বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর পর সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া নিরাপত্তা নিয়েছে।

আগের রাতের ঘটনার পর বুধবার দুপুরে উপজেলার মংলারগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এসময় তারা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা দেওয়ার উপরে জোর দেন।

পরে বিকালে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সব ধর্মের ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সেখানেও সবাইকে শান্ত থাকা এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের পর রাতেই সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রামে আসেন। এ খবর পেয়ে হামলার মুখে যারা পালিয়ে গিয়েছিলেন; তারাও রাতে ভাঙা বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেনে।

তারা বলেন, সেনা ও পুলিশ সদস্যরা আসায় এখন তারা খানিকটা নিরাপদ বোধ করছেন।

বুধবার দুপুরে মংলারগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সঙ্গে পুলিশদেরও সেখানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন।

এছাড়া উপজেলা সদরের বাজার এলাকায় মন্দিরে সেনা সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে।

দুপুর ২টার দিকে মংলারগাঁও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেজর মো. আল জাবির আসিফ বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে এতে আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও এলাকাবাসী সবাই এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে এর আগে ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

“এখানে মূল অপরাধী হচ্ছে কিছু মানুষ বা একটি গোষ্ঠী যাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। এর আগে কখনও দোয়ারাবাজরে এমন হয়নি। ছোট একটা কাজের জন্য কী হয়ে গেছে। তবে কোনো প্রাণহানি হয়নি সেটার জন্য শুকরিয়া।”

তিনি বলেন, “আপনাদের ছেলেমেয়েদের খেয়াল রাখবেন, যাতে ছোট কোনো কাজের জন্য বড় মাসুল দিতে না হয়। আপনারা নিরাপদ ফিল করেন; আমরা এখানে ক্যাম্প করেছি। কোনো ধরনের উসকানিতে কান দেবেন না। সবাইকে সচেতন থাকবেন, আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।

“আমরা ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বসেছি। আপনাদের এলাকায় খুব সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। এলাকার মানুষজন এসে গতকাল আপনাদের কেন্দ্রীয় মন্দির রক্ষা করেছেন। এই সম্প্রীতি বজায় রেখেই সবাইকে চলতে হবে।”

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে সদর ইউনিয়নের মংলারগাঁও গ্রাম ও উপজেলা সদরের বাজারে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দোয়ারাবাজার লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক খোকন রায় বলেন, যে যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবামনানার অভিযোগ উঠেছে তার বাড়ি উপজেলার মংলারগাও গ্রামে। মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামের অন্তত ত্রিশটি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপর মিছিল নিয়ে বাজারে এসে শতাধিক হিন্দু দোকান ভাঙচুর করা হয় ও ৪/৫ টি স্বর্নের দোকান লুটপাট করা হয়।

তিনি বলেন, মিছিলকারীরা বাজার এলাকার লোকনাথ মন্দিরে হামলা চালিয়ে পুরো মন্দির লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এতে মন্দিরের ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া থানার পাশ্ববর্তী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌর দাসের বাসায় হামলা চালিয়ে লুটপাট ও পারিবারিক মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশ মংলারগাঁও গ্রামের আকাশ দাসকে (২০) আটক করেছে; যার বিরুদ্ধে আরেকজনের ফেসবুক পোস্টে গিয়ে ধর্মকে অবমাননা করে কমেন্ট করার অভিযোগ তুলেছে এলাকার কিছু লোকজন।

এ বিষয়ে ওসি জাহিদুল বলেন, আকাশ দাসের আইডি থেকেই ফেসবুকে কমেন্টটি করা হয়েছে; পুলিশ এটির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। আর এ ঘটনায় সাইবার আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আকাশকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত