১৪ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৯
সাদা পাথরকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে সিলেটের প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বুধবার রাত থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার মধ্যরাত থেকে রাতের মধ্যেই সাদা পাথর থেকে লুট হওয়া ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে বিছিয়ে দেওয়া হয়।
এই কার্যক্রমে উপজেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
এরআগে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাদা পাথরের আশপাশ এলাকায় অভিযান চালায় টাক্সফোর্স। অভিযানে সাদাপাথরের পাশের কালাইরাগ এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এ ছাড়া কলাবাড়ি এলাকায় পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রাতে এসব পাথর সাদা পাথরে বিছিয়ে দেওয়া হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সহায়তা করে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যতটুকু পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে, তারা ততটুকু পর্যন্ত গেছে। রাতে এসব পাথর সাদাপাথরে বিছিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে বুধবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউজে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের সমন্বয় সভায় পাথর লুটপাট ঠেকানো এবং লুট হওয়া পাথর সাদাপাথরে পুনঃস্থাপনে পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ।
সভায় গৃহীত পাঁচ সিদ্ধান্ত হলো-
১. জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনীর দায়িত্ব পালন।
২. গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে যৌথ বাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি।
৩. অবৈধ ক্রাশিং মেশিন বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান অব্যাহত রাখা।
৪. পাথর চুরির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা।
৫. চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২০ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ থাকা সিলেটের সব কটি পাথর কোয়ারিতে গণলুট শুরু হয়। কয়েক হাজার পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ লুটপাট চলে বলে অভিযোগ। তখন অন্যান্য পাথর কোয়ারিতে গণলুট চললেও তুলনামূলকভাবে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে লুটপাট কম হয়। তবে গত ২৩ এপ্রিল থেকে সাদাপাথর এলাকায় আবার পাথর লুট শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ দেদার লুটপাট চালিয়ে এলাকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদের উৎসমুখেই সাদাপাথরের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে এ পর্যটনকেন্দ্র। ছোট-বড় অসংখ্য পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতোধারা এ পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমান। এখন পাথর লুট হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা হতাশ।
আপনার মন্তব্য