
০৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:০৭
সিলেট নগরের বৃহৎ জলাধার ধোপাদিঘির সব মাছ মারা গেছে। দিঘির জলে ভেসে ওঠেছে মরা মাছ। মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। এতে করে ধোপাদিঘি ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
তবে একসাথে এতো মাছ কীভাবে মারা গেলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, রোববার রাত থেকেই ধোপাদিঘিতে মরা মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। সোমবার দুপুরে ওই দিঘিতে গিয়ে দেখা যায়, জাল দিয়ে মরা মাছ দিঘি থেকে তোলা হচ্ছে। নৌকায় করে করে এসব মাছ পাড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। রাত থেকেই এসব মাছ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে এখনও কয়েকটি নৌকা ভর্তি মাছ ওই এলাকায় রয়ে গেছে।
এদিকে, মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ধোপাদিঘির পাড় এলাকায়। এতে ধোপাদিঘির পাড় ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। ওয়াওয়ে বন্ধ ঘোষণা করে বাইরে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
তবে কি পরিমান মাছ মারা গেছে এবং কীভাবে মারা গেছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিষক্রিয়ায় মাছগুলো মারা যেতে পারে বলে অভিযোগ ওঠেছে। কয়েক হাজার মাছ মারা গেছে বলে জানা গেছে।
সিলেট নগরের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় ৬ একর আয়তনের ধোপাদিঘি। এরমধ্যে দিঘির ৫ একর জায়গার মালিক সিলেট সিটি করপোরেশন। বাকি এক একর ছিলো ধোপাদের মালিকানায়। দীর্ঘদিন বেদখলে ও প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর এই দিঘির ৩ দশমিক ৭৫ একর উদ্ধার করে সৌন্দর্যবর্ধণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ২১ কোটি ৮৫ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ধোপাদিঘিরপাড় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। ২০১৯ সালে এ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালে। পরে ২০২২ সালের ১১ জুন এর উদ্বোধন করা হয়।
ওয়াকওয়েটি উদ্বোধনের পরই সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর সিটি কর্তৃপক্ষ স্থানটি মেসার্স ইষান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। এর পর থেকে এখানে প্রবেশ করতে হলে প্রত্যেককে ৫ টাকা করে দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল পার্কিং ফি বাবদ গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ভেতরে চটপটি, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানও বসিয়েছে।
রোববার রাতে ধোপাদিঘির ওয়াকওয়ে ঘুরতে এসে অনেকে দিঘিতে মরা মাছ ভাসতে দেখতে পান। তাদের অভিযোগ, বিষ প্রয়োগে মাছ মারা হয়েছে। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন ওয়াকওয়ে ইজারাদাররা বিভিন্ন ভাদ্যপণ্যের দোকান বসিয়েছেন। এখানে ঘুরতে আসারা এখানকার খাদ্যপণ্যের উচ্ছিষ্ট ও প্লাস্টিক দিঘিতেই ফেলে দেন। এসব কারণে বিষক্রিয়ায় মাছগুলো মারা যেতে পারে।
সোমবার সকালে ওই দিঘি এলাকায় গিয়ে ইজারাদারদের কাউকে পাওয়া যায়নি। কয়েকজন শ্রমিককে দিঘি থেকে মাছ সরানোর কাজ করতে দেখা গেছে।
ইজারদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে কোন বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। এখানে নতুন মাছ ছাড়া হবে, তাই জাল ফেলা হয়েছিলো। জালের আঘাত পেয়ে মাছগুলো মারা গেছে।
তিনি বলেন, পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছগুলো পোনা খেয়ে ফেলে। তাই রবিবার আমি মাছ ধরার জন্য জাল ফেলি। জালের টানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাছগুলো মারা গেছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, আমি ঢাকায় একটি মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ইজারাদার প্রতিষ্ঠানই দিঘিতে মাছের পোনা ছেড়েছিলো। মাছগুলোর মৃত্যু নিয়ে নানাধরণের অভিযোগ পাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ব্যাপারে কারো দায় পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মন্তব্য