নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:৪১

সিলেটে এইচএসসিতে ফল বিপর্যয়—কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা?

বৃহস্পতিবার সারাদেশের সাথে সিলেট শিক্ষাবোর্ডেরও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছেছ তবে এবার সিলেটে রীতিমত ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে সিলেটে।

বিগত ১২ বছরের মধ্যে এবার সিলেটে পাসের হার সর্বনিম্ন। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এবার ফেল করেছে। আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে সারাদেশের মধ্যে সবার নিচে অবস্থান সিলেটের।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘোষণা হওয়া ফলাফলে সিলেট বোর্ডে ৫১.৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। আর সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সিলেট সর্বনিম্ন।

সকালে শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ ফলের কারণে সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল। তাছাড়া কলেজগুলোতেও ভালো মানের ইংরেজি শিক্ষক নেই। ফলে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে ফেল করেছে।

এছাড়া কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কম থাকার প্রভাবও ফলাফলে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার এবং জিপিএ-৫ আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে-কেন? এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল-পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ-৫-এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফলাফল ‘‘ভালো’’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’

গত বছর সিলেটে পাসের হার ছিলো ৮৫ দশমিক ৩৯ ভাগ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২ ভাগ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০ ভাগ, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০ ভাগ, আর ২০২০ সালে শতভাগ, ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ০৫, ২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭, ২০১৭ সালে ৭২ ভাগ, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯ ভাগ, ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ আর ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬।

২০২০ সালে করোনাকালীন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। যেটিকে ‘অটোপাস’ বলা হয়ে থাকে। ফলাফল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিগত বছরের এসএসসির ফল বিবেচনা নেওয়া হয়। আর ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কিছু নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল, যার ফলে পাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।

চলতি বছর সিলেটে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। যেখানে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যার মধ্যে ছেলে ২৭ হাজার ৭৬৪ জন আর মেয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ জন। মোট পাসকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৭০ জন। যার মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৮৭০ এবং মেয়ে ২২ হাজার ১ জন। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬০২ জন যার মধ্যে ছেলে ৬৮১ এবং মেয়ে ৯২১ জন। পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছেলেরা। ছেলে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪৯ দশমিক ৯৬ জন আর মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ ভাগ।

প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছেন ৪৫ দশমিক ৫৯ ভাগ পরীক্ষার্থী। আর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮। ১৬০২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন, মানবিক বিভাগে ১৫৩ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নেমেছে।

অপরদিকে, সিলেট বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে আর বেশি সিলেট জেলায়। সিলেটে পাসের হার ৬০ দশমিক ৬১ ভাগ, হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮, সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ এবং মৌলভীবাজারে ৪৫ দশমিক ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

এদিকে, এবার সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৩ জান। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১০ হাজার ১৩৭ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৬ হাজার ২৬০ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬ হাজার ৯৭ জন, যশোর বোর্ডে ৫ হাজার ৯৯৫ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৪ হাজার ২৬৮ জন, কুমিল্লা ২ হাজার ৭০৭ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ২ হাজার ৬৮৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ১ হাজার ৬৭৪ জন, কারিগরি বোর্ডে ১ হাজার ৬১০ জন ও সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সিলেট সর্বনিম্ন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত