শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ১৪:৫২

হবিগঞ্জ পৌরসভা : বরাদ্দ আছে, কাজ নেই, দুর্ভোগে পৌরবাসী

পরিষদ আছে। টাকা আছে। আছে লোকবলও। নেই শুধু উন্নয়ন। দুর্গতি হবিগঞ্জ পৌরবাসীকে ধরে রেখেছে  অক্টোপাসের মত। আর দুর্ভোগে নাকাল পৌরবাসী।

আর এ থেকে নাগরিকদের মুক্তি দেওয়ার চিন্তা কর্তৃপক্ষের আছে বলেও মনে করেন না ভুক্তভোগী নাগরিক সমাজ। বরং লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স, পানি কর ইত্যাদি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ইউজিপের  বরাদ্দকৃত সাড়ে ১১ কোটিরও বেশী টাকা এক বছরেও ব্যয় করতে পারেনি হবিগঞ্জ পৌরসভা। এই পৌরসভা অনেকটা ‘নামে তাল পুকুর, ঘটি ডুবে না’ প্রবাদ বাক্যের বাস্তব রূপ নিয়েছে।

পৌরসভার প্রকৌশল শাখা থেকে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আরবান গর্ভন্যান্স ইনফ্রাষ্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইউজিপ) হবিগঞ্জ পৌরসভার রাস্তাঘাট ড্রেন উন্নয়নে ইউজিপ-৩ প্রথম ফেইজে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। গত বছরের ১৩ নভেম্বর পৌরসভা দরপত্র আহবান করে। প্রথম লটে ১১টি রাস্তা ও ৫টি ড্রেন নির্মানে ৫ কোটি ৫৪ লাখ এবং দ্বিতীয় লটে ৪টি রাস্তা ও ৮টি ড্রেন  নির্মান ও সংস্কারের জন্য ৬ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

যথাসময়ে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও গত পৌর নির্বাচনের পর ওই টেন্ডার বাতিল হয়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে পুনরায় টেন্ডার আহবান করা হয়। দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত জুন মাসে।

মহা ধুমধামে সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহিরকে দিয়ে কাজের উদ্বোধন করা হয়। তারপর তথৈবচ। মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার কাজে হাত দেননি। রাস্তা সংস্কার ও ড্রেনের অভাবে কি পরিমান দুর্ভোগ তা পৌরবাসী হারে হারে টের পেলেও এর কিঞ্চিত পরিমান দুর্ভোগ ভারপ্রাপ্ত মেয়র বা কাউন্সিলর টের পান কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য কোনো কোনো কাউন্সিলর তার এলাকায় রাস্তাঘাটের দুরবস্থা সম্পর্কে বর্ননা দিতে গিয়ে ‘পদত্যাগ’ করারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানান।

দুর্ভোগের শিকার কেউ কেউ পৌরসভায় দ্বারস্থ হলে ‘এ মাসে কিংবা আগামী মাসে’ কাজ সম্পন্ন হবে- এমন আশ্বাসবাণী দিয়ে বিদায় করছেন সংশ্লিষ্ট জন প্রতিনিধিগণ।

এদিকে পৌরসভার গত সেপ্টেম্বর মাসের  নির্মান কাজ মনিটরিং রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রথম লটের ১১টি রাস্তা সংস্কার ও নির্মান কাজের একভাগ কাজও শেষ হয়নি। তেমনিভাবে ড্রেনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে ইউজিপের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভা কর আদায়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্টুভাবে পরিচালিত হলেও প্রকৌশল শাখার অবস্থা খুবই নাজুক। যথা সময়ে কাজ সম্পাদন না করায় ইউজিপের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে  অর্থ বছর শেষ হয়ে গেছে। যথাসময়ে গৃহীত প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে পারলে পরবর্তী ধাপে অরো অর্থ বরাদ্দ করা যেত। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় ইউজিপ-৩ এর কাজ শেষ করে পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মধুসুদন দাশ গত মে মাসে অবসরে যাওয়ার পর তার স্থলে কোন প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়নি। ১০ বছর ধরে শূন্য রয়েছে সহকারি প্রকৌশলীর পদ। মাত্র একজন উপ সহকারি প্রকৌশলী দিয়ে চলছে পৌরসভা প্রকৌশল শাখা। আর তাঁর একার পক্ষে এতগুলো প্রকল্প কাজের বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।

পৌরসভার ঠিকাদার দুলাল মিয়া জানান, তিনি  এই প্রকল্পের একাধিক নির্শান ও সংস্কার কাজ পেয়েছেন। কাজ শেষ করতে দেরী হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি টেন্ডারের কাজ পাওয়ার পর তা নিরূপন, সাইড বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব ও বর্ষার কারন দেখিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দীলিপ দাস বলেন, ঠিকাদারদের বার বার তাগিদ দেওয়া সত্বেও তারা কাজ শেষ করতে পারেননি। ফলে জনগন অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদেরকে ডেকে এনে কাজ সম্পাদনের জন্য কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি আশা করছি, বর্তমান শুকনো মৌসুমের মধ্যেই রাস্তা ও ড্রেন নির্মান কাজ শেষ হবে।

তিনি জানান, নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন নির্দেশ আসেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত