নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:৪০

পটকা খেয়ে পাঁচজনের মৃত্যু, অসুস্থ ১২

সিলেটের জৈন্তাপুরে পটকা খেয়ে বিষক্রিয়ায় দুই পরিবারের দুই শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন এবং জালালাবাদ রাগীর রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একে একে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এই দুই পরিবারের আরো ১২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের মধ্যে ৭ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মারা যাওয়া পাঁচজন হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত উত্তর মাইল গ্রামের মুন্সি মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম (৬০), আবদুর রহিমের ছেলে সুলেমান (২৫) ও লোকমান হোসেন (২০), স্কুলছাত্র রাহিন আহমদ (৮) ও মনি (১০)।

এ ছাড়া হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন উমর আলী (৪০), তার স্ত্রী মুর্শিদা বেগম (৩৫) ছেলে কাওসার (১৭), মেয়ে সারিকা (১৮), পাশের বাড়ির রোবহান (৬০), জয়নাল আবেদীন (৪০) ও রাজিয়া বেগম (৪০)।

সিলেটের বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র বাসিন্দারা পটকা মাছ হিসেবে খেলেও এটি কোনো মাছ নয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, পটকা কোনো মাছ নয়। এটি বিষযুক্ত একটি জলজপ্রাণী। পটকার কানের কাছে গ্রন্থিতে বিষ থাকে। পটকা খেলে বিষক্রিয়া হতেই পারে। এটি খেলে কেউ মারাও যেতে পারে।

একই ধরণের তথ্য জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়াও। তিনি বলেন, পটকার মধ্যে "টেকটাডোটক্সিন" নামক এক ধরণের বিষ থাকে। যা সায়ানাইট থেকেও ভয়ঙ্কর। ফলে পটকা খেলে মৃত্যুও হতে পারে।

তিনি বলেন, যারা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের জন্য হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেনকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অসুস্থদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান পরিচালক।

পটকা খেয়ে মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেলে ওসমানী হাসপাতালে ছুটে আসেন জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত উত্তর মাইল গ্রামের পাশাপাশি দুই পরিবার সোমবার রাতে বাজার থেকে পটকা কিনে আনেন। রাতে খাবার পর তারা সবাই একে একে বমি করতে শুরু করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে ওই পরিবারের ১০ জনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়া বলেন, যারা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের জন্য হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এনায়েত হোসেনকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এনায়েত হোসেন বলেন, ‘মানবদেহ থেকে এই মাছের বিষক্রিয়া কাটানোর কোনও ওষুধ নেই। তবে আমরা রোগীদের বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবীর বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে গিয়েছি। মারা যাওয়াদের দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত