দোদুল খান

২৯ মার্চ, ২০১৭ ১৯:৪২

‘মর্জিনা’কে শনাক্ত করতে পারেনি পরিবার

এখনো পৌঁছায়নি বোম ডিসপোস্যাল ইউনিট, ভিতরেই রয়েছে দুই জঙ্গির মৃতদেহ

সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে পরিচালিত জঙ্গি অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ এ নিহত এক নারী জঙ্গির সঠিক পরিচয় বান্দরবন থেকে আসা পরিবারের সদস্যরা সনাক্ত করতে পারেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সীতাকুণ্ড অভিযানে নিহত জঙ্গি জুবাইরা ইয়াসমিন এর বোন মনজিয়ারা পারভিনই সিলেটে নিহত পুলিশের ধারণাকৃত জঙ্গি সদস্য মর্জিনা কী না তা নিশ্চিত করতে জুবাইরা ও মনজিয়ারার বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হক মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে সিলেটের উদ্দেশে বান্দরবান ত্যাগ করেন।

বুধবার (২৯ মার্চ) সকালে সিলেট পৌঁছালে তাদেরকে নিহত নারী জঙ্গির মৃতদেহের ছবি ও বাসা ভাড়া নেয়ার সময় দেয়া পরিচয়পত্রের ছবি দেখানো হয়। তবে তাদেরকে মর্গে মৃতদেহ দেখানো হয়নি।

ছবি দেখে নিহত নারী জঙ্গিকে মনজিয়ারা হিসেবে সনাক্ত করতে পারেনি মনজিয়ারার পরিবার বলে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকনউদ্দিন।

তিনি সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নুরুল ইসলাম ও জিয়াবুল হকের ডিএনএ স্যাম্পল রাখা হয়েছে যার সাথে নিহত জঙ্গির ডিএনএ ক্রস ম্যাচ করে পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের নুরুল ইসলামের মেয়ে জুবাইরা সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। নুরুল ইসলামের আরেক মেয়ে মনজিয়ারাও নিখোঁজ এবং এ পরিবারের আরেক সদস্য জহিরুল হক (জসিম) কেও জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত নারীই বান্দরবানের মনজিয়ারা পারভিন কিনা এটা নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার সকালে সিলেট পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বান্দরবান জেলা পুলিশকে বার্তা পাঠানো হয়। আর এ বার্তা পেয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ মনজিয়ারা পারভিনের পরিবারের দুই সদস্যকে সিলেট পুলিশের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।

ওই ভবনে অপারেশন পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী গত সোমবার এক নারী ও এক পুরুষ জঙ্গির লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তখন পুলিশের পক্ষে থেকে বলা হয়, ওই নারী জঙ্গিই মর্জিনা হতে পারেন। মঙ্গলবার ওই দুই জঙ্গির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং তাদের ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, ওই দুই জঙ্গির মৃতদেহ থেকে সংগৃহিত ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ঢাকায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, এতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এর সাথে মনজিয়ারার পরিবারের সদস্যদের সংগৃহিত ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্রে জানা যায়, মনজিয়ারা বেগমের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩ এপ্রিল। তার বাবার নাম নুরুল আমিন, মায়ের নাম সাবেকুর নাহার। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ২৭৮ নং বাইশারী মৌজার অংশ ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এদিকে শিববাড়ি এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতিয়া মহলে রয়ে যাওয়া অপর দুই জঙ্গির মৃতদেহ এখনো ভবনের মধ্যেই রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেলে অভিযান সমাপ্ত হওয়ার পর পুলিশের কাছে আতিয়া মহলের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর ঢাকায় বোম ডিসপোস্যাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। বুধবার এ ইউনিটের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বোম ডিসপোস্যাল ইউনিট পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার বাসুদেব বণিক জানান, পুলিশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী, তবে ভিতরে প্রচুর বোমা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশের বোম ডিসপোস্যাল ইউনিট আগে সবগুলো বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করবে, তারপর পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত