বড়লেখা প্রতিনিধি

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০১:২৬

বড়লেখায় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার দায় স্বীকার স্বামীর

দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী স্মৃতি রানি দাসকে (২৮) দা দিয়ে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে পুলিশের হাতে আটক স্বামী বিধু ভূষণ দাস (৩৭)। গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে ঘাতক স্বামী। তার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেন মৌলভীবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান চৌধুরী।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফ উদ্দিন। ৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হরিনবদি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিধু ভূষণ দাস ওই গ্রামের অশ্বিনি দাসের ছেলে।

জবানবন্দিতে ঘটনার দিন সকালে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া ও পরবর্তীতে রান্না ঘর থেকে বঁটি দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা এবং হত্যা পরবর্তীতে গ্রেপ্তার পূর্ব পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা করে বিধু ভূষণ দাস। ঘটনার আগে একমাত্র শিশু কন্যাকে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় বিধু। এক পর্যায়ে বিধু রান্না ঘর থেকে বঁটি দা এনে ঘরের মেঝেতে ফেলে গলায় কয়েকটি পোচ দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে হত্যা করে। পরে সে ঘরের পিছনের টিউবওয়েলে গোসল করে। কেউ কিছু বুঝার আগেই কাপড় চোপড় পরে কাজের উদ্দেশ্যে করে ঘর থেকে বের হয়। পরে অন্যবাড়ির লোকজন স্মৃতির ঘরে এসে গলা কাটা দেখে বিধুকে ফোনে ঘটনাটি জানান ও পুলিশে খবর দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে সে প্রচারণা চালায়।

এর আগে পুলিশ গত ৭ ডিসেম্বর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায় ও রহস্য উদঘাটনে পুলিশ আটককৃতদের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে আদালতে। আদালত আসামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফ উদ্দিনের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয় বিধু ভূষণ দাস। পরে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে ঘাতক স্বামী বিধু ভূষণ দাস।

উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হরিনবদি গ্রামের বিধু ভূষণ দাসের স্ত্রী। স্মৃতি রানি দাসের নিজ কক্ষে গলা কাটা অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। স্ত্রীকে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য কৌশলে স্বামী বিধু ভূষণ দাস কাজের কথা বলে বাইরে বের হন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির অন্য লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে সে বাড়িতে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গলা কাটা অবস্থায় স্মৃতির লাশ ঘরের বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ এবং স্বামী বিধু ভূষণ দাস ও একই গ্রামের মৃত জ্যোতিন্দ্র দাসের ছেলে হরিবল দাসকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনার রাতে নিহতের ভাই অকিল কান্তি দাস বাদী হয়ে বোন জামাই বিধু ভুষণ ও হরিবল দাসকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফ উদ্দিন সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে বলেন, ‘বিধুর সাথে স্মৃতির বিয়ের পাঁচ বছর হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য কলহ চলছিল। ঘটনার দিন সকালে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর সে বঁটি দা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে। কেউ বুঝার আগে কৌশলে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। হত্যার বিষয়টি সন্দেহযুক্ত ছিল।

পাশাপাশি হত্যার ঘটনারও কোন ক্লু ছিল না। পরে স্বামীসহ আরো একজনকে আটক করা হয়। নিহতের ভাইয়ের মামলার প্রেক্ষিতে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। এরপর বিজ্ঞ আদালতে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেয়।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত