১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২০:৩৬
বখাটে ইয়াহিয়ার উৎপাতের কারণে ছয় মাসে আগেই হুমায়রা আক্তার মু্ন্নির স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন মা রাহেলা বেগম। গত নভেম্বরে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার সময় নিজেই মেয়েকে সাথে নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রায় তিনমাস আগে এ ব্যাপারে র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন তিনি।
তবু মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি রাহেলা বেগম। গত শনিবার রাতে ঘরে ঢুকে মুন্নিকে পড়ার টেবিলেই উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে খুন করে মো. ইয়াহিয়া। প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখাত হয়ে মুন্নিকে খুন করা হয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। মুন্নি দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই বিদ্যালয় থেকে আগামী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিলো তার।
মুন্নির মা রাহেলা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, মুন্নিকে বছরখানেক ধরে রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে উত্ত্যক্ত করতো ইয়াহিয়া। উত্যক্তের কারণে প্রায় ৬ আগেই মুন্নির স্কুলে যাওয়াআসা বন্ধ করে বাসায় শিক্ষক রেখে তাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। তারপর আমার মেয়ের শেষরক্ষা হল না।
মুন্নির চাচা নুর মিয়া (৪০) বলেন, দিরাই শহরের মাদানী মহল্লার নানার বাসায় মুন্নি মা ও ছোট ভাই মাইদুল ইসলাম মাহাদী (৯) বসবাস করতো। তাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদিপুর। বাবা হিফজুর রহমান ইতালী প্রবাসী। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য শহরে থাকতেন রাহেলা বেগম। ঘটনার দিন বাসার ভাড়াটে অন্য দুইটি পরিবার বাসায় ছিলেন না। ফলে বাড়িটি ছিল ফাঁকা। এই সুযোগেই বাসায় ঢুকে মুন্নিকে ছুরিকাঘাত করে বখাটে ইয়াহিয়া।
মুন্নির সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক আগে উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন সরদারের বখাটে পুত্র ইয়াহিয়া সরদার উত্যক্ত করতে শুরু করে মুন্নিকে।
মুন্নির স্বজরা বলেন, ইয়াহিয়ার যন্ত্রনায় ছয় মাস ধরে ঘরে অনেকটা অবরদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো মুন্নিকে। তবু বাসার পাশে গিয়ে প্রায়ই ইয়াহিয়া তাকে উত্যক্ত করতো। হত্যা ও তুলে নেওয়ার হুমকি দিতো। প্রায় তিনমাস আগে র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন মা রাহেলা বেগম। গত ২৬ অক্টোবর এ নিয়ে রাহেলা বেগম তার বাসায় শালিসও ডাকেন। শালিসে দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাফর ইকবাল, বখাটে ইয়াহিয়ার দুলাভাই তোফাজ্জল হক চৌধুরী ও রাহেলা বেগমের আত্মীয়রা ছিলেন। শালিসে আর বখাটেপনা করবে না বলে লিখিত মুচলেকা দেয় ইয়াহিয়া।
দিরাই থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার দুই দিন আগে বাসার পাশে গিয়ে ইয়াহিয়া তার হাত কেটে মুন্নিকে হত্যার হুমকি দেয়। এসময় তাকে হত্যা করে সেও আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে আসে।
প্রতিবেশীরা জানান, শালিসে মুচলেকা দেবার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইয়াহিয়া। সে বাসায় আশপাশে এসে হুমকি দিতো মুন্নিকে। এরপর মুন্নির মা রাহেলা বেগম এহিয়ার আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি অবগত করে তাদের সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করার আকুতি জানান। কিন্তু পরিবারের লোকজনও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইয়াহিয়া সরদার সাকিতপুর গ্রামের কওমী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতো। কয়েক বছর আগে মাদ্রাসা থেকে মোবাইল চুরির কারণে সে বহিষ্কৃত হয়। এরপর গ্রামের মসজিদের দানবাক্সের টাকা চুরিরও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকার সালিসে তার বাবা ক্ষমা চান। তিনি ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে দিরাই পৌর শহরের সেন মার্কেটের জেডি সুজ দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয়।
এ ব্যাপারে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, ঘাতক ইয়াহিয়া সরদার ও তার সহযোগি তানভির আহমদকে আসামি করে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইয়াহিয়া কে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তার সহযোগি তানভিরকে গ্রেপ্তার করে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আপনার মন্তব্য