হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৫:৪২

স্বাস্থ্যকর শহর গড়তে খোয়াই দখলমুক্তের দাবি

‘দখল-দূষণমুক্ত পুরাতন খোয়াই চাই, স্বাস্থ্যকর নগরী চাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে 'নদী দেখি, ছবি আঁকি' বিষয়ক দুই দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে পুরাতন খোয়াই নদীর এম. এ. রব জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় এই কর্মসূচী শুরু হয়। আয়োজক সংগঠনের আমন্ত্রণে ছবি আঁকা কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন তরুণ চারুশিল্পী প্রসেনজিৎ চৌধুরী শিবু, রিয়াজুল আহসান পলাশ, আশীষ আচার্য্য, নিরঞ্জন মণ্ডল, প্লাবন চাষা বিন্দু, দীপ্ত আচার্য্য, মৌমিতা দাস ও রিংকু দাস।

কর্মসূচী চলাকালে আলোচনায় অংশ নেন ও উপস্থিত ছিলেন, বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ, সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, মনসুর উদ্দিন আহমেদ,  চৌধুরী জান্নাত রাখি, মনসুর আহমেদ, শাকিলা ববি, ওছমান গণি রুমী, মো. আমিনুল ইসলাম, শাহ মো. রাফেল, খাদিজা আক্তার, তানজিদা আক্তার প্রমুখ।

শিল্পীদের অঙ্কিত ছবিতে পুরাতন খোয়াই নদীর দূষণ, দখলদারিত্বের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠে।

চারুশিল্পী প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা নদী-জলাশয় রক্ষার ক্ষেত্রে বার্তা দিতে চাই।

শিল্পী আশীষ আচার্য্য বলেন, মানুষকে নদী দখল-দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, নদী ও পরিবেশ রক্ষায় সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

মৌমিতা দাস বলেন, এই কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে আমরা পরিবেশ ও আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।

কর্মসূচীর সমন্বয়কারী বাপা জেলা সেক্রেটারি ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদীর প্রতি মানুষকে যত্নবান হওয়া, ভালবাসা সৃষ্টি এবং নদী রক্ষায় উৎসাহিতসহ দখল-দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানানোর জন্য আমাদের এই কর্মসূচী।

তিনি বলেন, হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াইয়ের বর্তমান চিত্রটিও রীতিমত আঁতকে ওঠার মত। প্রায় চার দশক আগে খোয়াই নদী হবিগঞ্জ শহরের একাংশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হত। শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে সামান্য বন্যায়ই শহর প্লাবিত হত। ১৯৭৬-৭৭ সালে শহর রক্ষার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ‘মাছুলিয়া-রামপুর’ প্রকল্পে প্রায় ৩ কিলোমিটার এবং ১৯৭৮-৮৯ সালে ‘রামপুর-গরুরবাজার’ প্রকল্প গৃহীত হয়। দুই দফায় ৫ কিলোমিটার ‘লুপ কাটিং’য়ের (আঁকা-বাঁকা সোজাকরণ) মাধ্যমে খোয়াই’র গতি পরিবর্তন করে নদীটিকে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত করে দেওয়ার ফলে শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা খোয়াই শান্ত হয়ে থেকে যায়। এটির নাম হয়ে যায় ‘পুরাতন খোয়াই নদী’। ‘লুপ কাটিং’য়ের আগে ‘পুরাতন খোয়াই নদী’র প্রস্থ ছিল গড়ে ২’শ ৫০ থেকে ৩শ ফুট ও গভীরতা ছিল ২৫ থেকে ৪০ ফুট।

তিনি আরও বলেন, নদী শাসনের পর পেরিয়ে গেছে ৪ দশক। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে পুরাতন খোয়াই নদীর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ভূমিখেকোদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, বিভিন্ন অংশ দখল হয়েছে, পরিকল্পিত-অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের শিকার হয়েছে, দূষণের শিকার হয়েছে পুরাতন খোয়াই। সব মিলিয়ে নদী সংশ্লিষ্ট হবিগঞ্জের মানুষের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটি। বর্তমানে পুরাতন খোয়াই নদী হবিগঞ্জ শহরের সর্ববৃহৎ ডাস্টবিনে রূপ নিয়েছে। নদীর আশপাশের বাসাবাড়ির পয়:নিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। এই ময়লা-আবর্জনা ফেলার মধ্য দিয়ে দখলি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।  ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পুরাতন খোয়াই নদীটি যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। কোথাও কোথাও এটি সরু নালার আকার ধারণ করেছে। হবিগঞ্জকে একটি স্বাস্থ্যকর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পুরাতন খোয়াই নদীটি দখলমুক্ত করা হবিগঞ্জবাসীর দাবী।

তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জ শহরের বৃষ্টির পানির প্রধান আধার পুরাতন খোয়াই নদীর অধিকাংশ দখল-ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা বা কৃত্রিম বন্যার। এজন্য পুরাতন খোয়াই নদী দায়ী নয়, দায়ী হচ্ছে কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ এবং নদীটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা।

বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, পুরাতন খোয়াই রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারসহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলন করেছে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির উদ্যোগে পুরাতন খোয়াইয়ের একাংশের অবৈধ দখলের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয় নদীর উভয় দিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও খননের জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। আমাদের দাবী পুরাতন খোয়াই নদীর পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করে স্বাস্থ্যকর সুন্দর নগরী হয়ে উঠুক হবিগঞ্জ শহর।

পরে শিল্পীরা অঙ্কিত ছবি তোফাজ্জল সোহেলের হাতে তুলে দেন। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচী চলবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত