নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:৩৯

মোগলাবাজারে মিথ্যে মামলা দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার ইউনিয়নের ছতিঘর গ্রামের একই পরিবারের চারজনের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির ওপর।

রোববার (৭ অক্টোবর) সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন  দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের ছতিঘর গ্রামের আব্দুল হাই লিলু মিয়ার মেয়ে লতিফা বিনতে লিলু।

এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরে সুযোগ বুঝে মামলা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের অযথা হয়রানী করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের জুন মাসের ১৫ তারিখ বেলা ২টার দিকে গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে রাহেল মিয়া ও মজম্মিল আলীর ছেলে আমির হোসেনের মধ্যে পুকুরের মাছধরা নিয়ে মারামারি হয়।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায়  লতিফা বিনতে লিলুর পিতা লিলু, ভাই ইমন আহমদ, চাচা এমরান আহমদ ও আরেক সম্পর্কীয় চাচা শফিকুর রহমানকে আসামী মামলা করেন আমির হোসেন। অথচ তারা ওইদিন জুমআর নামাজ শেষে বিকাল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত  তারাবির টাকা উত্তোলন ও মসজিদের নিলাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

লতিফা অভিযোগ করে বলেন, মূলত বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে বিরোধ, সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া পায়তারার অংশ হিসেবে ওই মামলা করা হয়। মামলার কারণে ভয়ে তারা ভাই বোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না।

লিখিত বক্তব্যে লতিফা বিনতে লিলু উল্লেখ করেন, তার দাদা মরহুম তাহির আলী মোগলাবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। পিতা আব্দুল হাই লিলু মিয়াও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছতিঘর মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষও তিনি।

কিন্তু সেদিনের মারামারির ঘটনায় মজম্মিল আলী ওরফে গেদা মিয়াসহ অনেকে আহত হন। আহতদের কয়েকজনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। ঘটনার ৩ দিন পর মোগলাবাজার থানায় মারামারির ঘটনায় মামলা দায়ের করেন আমির হোসেন।

তিনি আরো বলেন, অজ্ঞাত কারণে এই মামলায় যারা জড়িত ছিলেন না তাদেরও আসামী করা হয়। মামলার আসামী করা নিয়ে এলাকার মানুষও হতবাক।

লতিফা বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে একই এলাকার মৃত হাফিজ ময়না মিয়ার ছেলে ছালেহ আহমদের সঙ্গে তার পিতার বিরোধ ছিল।

অন্যদিকে, আমির হোসেনের সঙ্গে ছালেহ আহমদের সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাদী আমির হোসেনের মামলায় ছালেহ আহমদের বিরোধীদের ইন্ধনে আসামী করা হয়।

লতিফা দাবি করেন, মারামারির ঘটনায় আহত মজম্মিল আলীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যান তার ছেলে আমির হোসেন। পরে আবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেন।

ওসমানীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুন ভোরে মজম্মিল আলী মারা যান। এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা নুরুল আলম ৩০২ ধারা সংযোজনে আদালতে আবেদনও করেছেন।

লতিফা প্রশ্ন তুলেন, আমির হোসেন তার পিতাকে ঢাকায় নিয়ে গেলেও কেন সেখানে চিকিৎসা করান নি। চিকিৎসায় বিলম্ব হওয়ায় তার মৃত্যু হতে পারে। এ গাফলতি কার। এছাড়া পুকুর থেকে মাছ মারা নিয়ে সংঘর্ষ হলেও এজাহারে দেখানো হয়েছে ছতিঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ শতক ভূমি বর্গাচাষে বাধা প্রদান নিয়ে।

ওই ভূমি লতিফার পিতা আব্দুল হাই লিলু মিয়ার মৌরসি স্বত্ব দাবি করে বলেন, ৭৯২ নং দাগের ওই ভূমি থেকে আগেই আমার বাপ-দাদা বিদ্যালয়ে ৩৫ শতক ভূমি দান করেন। যে কারণে দানকৃত ভূমি ও অবশিষ্ট ভূমি নিয়ে কারো সাথে বিরোধের কথা নয়। অথচ মামলায় জমি সংক্রান্ত ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে লতিফা আরও উল্লেখ করেন, ২০০৫ সালের ২৭ মে তাদের বাগান বাড়ির দখলদার তার পিতার চাচাতো ভাই আব্দুল খালিককে শাসিয়ে চাঁদা দাবি করেন একই এলাকার মৃত করামত আলীর ছেলে মস্তাকিন আলী, মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে লিলু মিয়া, তার ভাই লয়লু মিয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মজম্মিল আলী গেদা। এ ঘটনায় ২০০৫ সালের ১ জুন আদালতে দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন আব্দুল খালিক। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলে।

চাচারা সবাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী উল্লেখ করে লতিফা জানান, বাড়িতে একমাত্র তার পিতা সবকিছু দেখাশোনা করেন। আর তাকে হটিয়ে বাগান বাড়ি গ্রাস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন ছালেহ আহমদ, আমির হোসেন, একই এলাকার আনা মিয়া ও মাহমুদ আলী গংরা। যার বহি:প্রকাশ হিসেবে ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

বর্তমানে তিনি ও তার ছোট ভাই প্রাণভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না দাবি করে এ ব্যাপারে দুষ্কৃতিকারীদের মুখোশ উন্মোচন এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমদ, মাসুক মিয়া, আরব আলী, জুয়েল আহমদ, জামিল আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত