হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১২:৪৪

জেএসসিতে অকৃতকার্য হয়েও নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ!

'জেএসসিতে ফেইল হলেও নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ’- এমন অভিনব বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে শ্রীমঙ্গলের ‘মডেল একাডেমী এন্ড বিএম কলেজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যাদের শিক্ষার্থী ভর্তিরই কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া জেএসসি অকৃতকার্য হলে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির কোনো সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। এমন বিজ্ঞাপনকে প্রতারণা বলেও জানিয়েছেন তারা।

‘মডেল একাডেমী এন্ড বিএম কলেজ’ কর্তৃপক্ষ বলছে, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ভোকেশনাল শাখায় তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছেন। অথচ এ স্কুল এন্ড কলেজের নেই কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি বা ছাত্র ভর্তির কোন অনুমতি। ঢাকার কমলাপুর এলাকার মানিকনগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের নামে শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন, এমনটাই জানালেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দেওয়া মাহবুবুল আলম স্বপন।

ছাত্র ভর্তি করার বৈধতা না থাকা স্বত্বেও প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এ বছর কত ছাত্র ভর্তি হয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য জানাননি মাহবুবুল আলম স্বপন। তবে বিগত বছরে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে নবম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছে বলে তিনি জানান।

সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকার এই স্কুলটিতে বিভিন্ন স্কুল থেকে অকৃতকার্য জেএসসি পরীক্ষার্থীরা যোগাযোগ করছেন। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অভিভাবকরাও এই চটকদার বিজ্ঞাপনের খবরে নিজেদের ছেলে মেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, জেএসসিতে ফেলকৃত ছাত্রকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করার ব্যাপারে মডেল একাডেমী স্কুলের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ভর্তি বাবদ ৩০০০ টাকা এবং জেএসসি রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলেছে।

শিমুল নামের এক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, একটা স্কুল যখন এধরনের বিভ্রান্তিমুলক বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র ভর্তি করায় তখন অন্য শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি এমন বিধান থেকে থাকে তাহলে তা চরম বৈষম্যমুলক এবং উদ্বেগজনক, যদি তা হয় ভাঁওতাবাজি তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরী। জেএসসি অকৃতকার্যরা যদি উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে তাহলে তো পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না, এই ধরনের কার্যকলাপ সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ।

মডেল একাডেমী স্কুল এন্ড বিএম কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুল আলম স্বপন মুঠোফোনে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি গত বছর প্রায় ২০জন শিক্ষার্থী এভাবে ভর্তি নিয়েছি। তারা এখন নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের ফলাফল কিছু দিনের মধ্যে বের হবে।

তিনি বলেন, আমার স্কুলের নামে বোর্ড থেকে অনুমোদন গ্রহণ করি নি। ঢাকার মানিক নগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এর নামে আমার এখানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। এখন ঢাকার স্কুলের মাধ্যমে বোর্ড সুযোগ দিচ্ছে বিধায়ই এলাকার শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমি ভর্তি নিচ্ছি।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড (বিটিইবি)-এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পাল সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকেকে বলেন, বিটিইবিতে জেএসসি ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি থাকার সুযোগ নেই।

প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ (এসএসসি-ভোকেশনাল) মো. আব্দুস সেলিম বলেন, অষ্টম শ্রেণি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে কোন শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অধীনে কোন স্কুলেই নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীকে জেএসসি পরীক্ষায় পাশ করেই নবম শ্রেণিতে ভোকেশনালে ভর্তি হতে হবে।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার কর্মদিবসের শেষভাগে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে তথ্যটি পাওয়ার সাথে সাথেই আমি ‘মডেল একাডেমী এন্ড বিএম কলেজ’ প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুল আলম স্বপনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলি। তিনি ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাকে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি এই প্রতিষ্ঠানের সকল কাগজপত্র জরুরী ভিত্তিতে নিয়ে আসার জন্য, কাগজপত্র পরীক্ষা করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত