হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৪:০২

দলের মনোনয়ন না পেলেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যান শ্রীমঙ্গলের আফজাল

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. আফজাল হক বরাবরের মতো এবারো দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে। তবে তাঁর এ বিদ্রোহী অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়াকে তিনি বিদ্রোহী হিসেবে  না দেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করতেই উৎসাহী।

তিনি সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে শ্রীমঙ্গলের ইউপি নির্বাচনের সময় ৩ নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তবে সে বছর তিনি পরাজিত হন। পরে ১৯৯৭ সালে ফের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। সে বছর অবশ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি কমলেশ ভট্টাচার্যকে হারিয়ে সদর শ্রীমঙ্গল ইউপি চেয়ারম্যান হন তিনি। সেসময় চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে জিতেছিলেন স্বর্ণপদকও।

এরপর তৃতীয়বারের ২০০৩ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফণীভূষণ চক্রবর্তীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে নামেন তিনি। তবে সে বছর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফণীভূষণ ও মো. আফজাল হক দুইজনেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. দুদু মিয়ার কাছে পরাজিত হন। পরে ২০১১ সালের আবারো ইউনিয়ন পরিষদের নির্দলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ভানু লাল রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সে বছরও তিনি পরাজিত হন এবং নির্বাচনী ফলাফলের দিক দিয়ে হন তৃতীয়।

এরপর পঞ্চমবারের মতো ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ভানু লাল রায়ের বিপক্ষে গিয়ে ফের নির্বাচনী দ্বৈরথে অবতীর্ণ হন তিনি। সেবারও পরাজয় বরণ করেন তিনি।

একই বছর শ্রীমঙ্গল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে আবারো অবস্থান নেন মো. আফজাল হক। সেসময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও তিনি  নিজেও হেরে যান মশিউর রহমান রিপনের কাছে। এভাবেই তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবারের মতো এবারও তিনি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় কৃষি লীগের সভাপতি মো. আফজাল হক ও শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রণধীর কুমার দেবের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। এমনকি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগেই, হ্যান্ড লিফলেট বের করে শহর জুড়ে প্রচারণায় নেমেছেন তিনি। পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে এলাকাবাসীর দোয়া চাইছেন ও নিজের কাজের ফিরিস্তি বলে বলে বেড়াচ্ছেন।

দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে তাঁর বারংবার এমন অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে আফজাল হক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, " আমি দলের লোক হলেও দল আমাকে মূল্যায়ন করে না। এজন্য অবশ্যই স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা দায়ী। প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রতি ভোট হাজার টাকারও উপর খরচ করে ক্রয় করেছে, নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এবারের নির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি শুধুমাত্র তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের অনুরোধে।"

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কৃষি লীগের সভাপতির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ বলেন, "জনগণ হল সোনার বাংলার মালিক। জনগণের এতো ঠেকা পড়ে নাই যে কাউকে অনুরোধ করে জনপ্রতিনিধি করবে। আর নৌকার নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা কেন নিজেদের পায়ে কুড়াল মারবে, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে প্রার্থী দাঁড় করানোর দায় দলের নেতাকর্মীর উপর চাপানো মনগড়া দাবী, বিভ্রান্তি ও অমূলক।

বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজয় বরণের জন্য তিনি দলীয় ঘরানার ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছেন বলে জানান। এক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার গভীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছেন বলে সিলেটটুডেটোয়েন্টিফোরের সাথে একান্ত আলাপচারীতায় বলেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও সভা প্রধান শেখ হাসিনা রণধীর বাবুকে প্রার্থী করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচিত হবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে কাজ করার। আমি নিজেও প্রার্থী ছিলাম, আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও প্রার্থী ছিলেন। যেহেতু উপজেলা কৃষক লীগের কমিটি জেলা থেকে করে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আমাদের এখানে বলার মতো কিছু নেই বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ জাতীয় কোন পদক্ষেপের সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের রণধীর কুমার দেব,আফজাল হক ছাড়াও জাকের পার্টির আব্দুল কাইয়ুম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত