জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ

০৬ জুলাই, ২০১৯ ২৩:৩৬

স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরেই লাশ হলো শিশুটি

স্কুলে নতুন বই হাতে জোনাকি (পেছনের সারিতে ডান থেকে প্রথম)। লাশ উদ্ধারের ঘন্টাখানেক আগের ছবি এটি

সিলেটের বিশ্বনাথে স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পরই এক শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির নাম জোনাকি বেগম (১০)। তাঁর মৃত্যুকে রহস্যজনক বলছে পুলিশ। বসত ঘরের তীরের ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শনিবার বিকেল উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তি পূর্ব জানাইয়ার আকবর আলীর কলোনী থেকে বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) দুলাল আকন্দ, এসআই মিজানুর রহমানসহ একদল পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্যে শিশুটির লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত জোনাকি মৃত খায়রুল ইসলামের বড় মেয়ে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার শেলবরস গ্রামে। চলতি মাসের পহেলা জুলাই থেকে শিশুটি তার মা আকলিমা বেগমের সঙ্গে ওই কলোনীতে বসবাস করছিল।

আকলিমা বেগম বলেন, পেশায় বাবুর্চি স্বামী খায়রুল ৬বছর আগে মারা যান। পরে জেসমনি বেগম জুনাকি (১০) ও তার একমাত্র শিশুপুত্র সুমন ইসলামকে (৭) নিয়ে বাড়ি বাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পহেলা জুলাই ওই বাসায় আসার পর ২ জুলাই তার ছেলেমেয়ে দু’জনকে পার্শ্ববতি আকবর আলীর কলোনীতে পরিচালিত ‘আশার আলো এবিএএল স্কুলে’ ভর্তি করেন। বর্তমানে ওই স্কুলে জোনাকি ২য় শ্রেনীতে আর সুমন প্রথম শ্রনীতে অধ্যয়নরত।

প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালে ‘আশার আলো এবিএএল স্কুলে’ বই আনতে ছেলে-মেয়েকে পাঠিয়ে তিনি  এক বাসায় ঝিয়ের কাজে চলে যান। দুপুর দেড়টারদিকে মেয়ের আত্মহত্যার খবরে পেয়ে তিনি বাসায় ফিরেন। এসময় ঘরে গিয়ে দেখতে পান মেয়েটির পা মাটিতে আর গলায় তারই কালো ওড়না পেঁচানো রয়েছে। তার দাবি কেউ তার মেয়েকে হত্যা করেছে।

আকলিমা তার মেযেকে ২য় শ্রেণীর ছাত্রী দাবি করলেও ওই স্কুলের শিক্ষিকা শামীমা বেগম বলেছেন, অক্ষর জ্ঞান না থাকায় তাকে তিনি ভর্তি করতে পারেন নি। তবে, মেয়েটির মন খারাপ দেখে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ২য় শ্রেণীর একসেট বই তার হাতে দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোনাকির ছবিও তুলেছেন। তারপর দুপুর ১২টার দিকে ছুটি দিয়ে দিলে জোনাকি বই হাতে বাসায় যায়। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে তিনি জানতে পারেন ওই মেয়েটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পাশের ঘরের দিনমজুর আমির আলী জানান, তিনি ও তার স্ত্রী বাইরে কাজে ছিলেন, খবর পেয়ে তারা বাাসয় ফিরেছেন। তবে, রিকশা মেকানিক জয়নাল মিয়ার স্ত্রী কুলছুমা বেগম বলেছেন, দুপুর সাড়ে ১২টারদিকে তিনি বারান্দায় রান্না করছিলেন। এসময় বই হাতে জোনাকি তার ছোটভাইকে বাসায় ফিরতে দেখেছেন। কিন্তু ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই এক মেয়ে এসে তাকে আত্মহত্যার খবর দিলে  তিনি দৌড়ে গিয়ে তীরের সঙ্গে ফাঁস লাগানো দেখতে পান।

বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম ও ওসি তদন্ত দুলাল আকন্দ বলেন, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা ধারণা করলেও মেয়েটির মৃত্যু রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট ছাড়া সঠিকভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না জানিয়ে তারা বলেন, হত্যা না আত্মহত্যা, এ রহস্য উদঘাটনে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত