নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২০:৪৩

নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ আরিফের

সিলেট নগরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে নাগরিকদের নিয়ে করা মতবিনিময় সভার এ অভিযোগ করেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র নগরের উন্নয়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথা তুলে ধরেন ও এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। সভার শুরুতেই হকারমুক্ত ফুটপাত, নগর এক্সপ্রেস, চলমান উন্নয়ন কাজ, সিএনজি অটোরিকশা ও লালবাজার ইস্যু নিয়ে বক্তব্য দেন মেয়র।

বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ এখন কাজ করার সময়। জানুয়ারির মাসের মধ্যে এসব রাস্তা, ফুটপাত, ড্রেনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে সবাই সমস্যায় পরবেন। কারণ এর পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে। আর একবার বৃষ্টি শুরু হলে কাজ করা যাবে না। তাই এসব কর্মকাণ্ড তরান্বিত করতে সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

সিএনজি অটো রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা সিসিকের পক্ষ থেকে যাত্রী চাউনিতে কাজ করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। কাউকে উচ্ছেদের জন্য নয়। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নগর এক্সপ্রেস বাস চলাচলের ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিকরাও একাত্মতা পোষণ করেছেন। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চালকরা কিছু না বুঝে মানববন্ধন করছেন। যাত্রী চাউনিতে কাজ করতে দিচ্ছেন না। নগর এক্সপ্রেস বাসের পাশাপাশি সিএনজি অটো রিকশাও চলবে। এতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই।    

ফুটপাতের বিষয়ে মেয়র বলেন, ফুটপাত নাগরিকদের চলাচলের জন্য, ব্যবসা করার জন্য নয়। আমরা এই বিষয়ে চেম্বারের সাথেও কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং চেম্বারের অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ীরা তাদের মার্কেটের সামনে হকার বসিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।

এছাড়াও তিনি অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটিকে (বিআরটিএ) বলা হলেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বলেন, নগরে ১১ হাজার অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। দুই হাজার অবৈধ ইঞ্জিন চালিত রিকশা চলছে কোন রোডে কতটি গাড়ী চলাচল করবে তা নির্ধারণের জন্য  বিআরটিএকে বলা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

মেয়রের বক্তব্যের পর সবাই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। এসময় নাগরিক সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা রাস্তা পর্যন্ত সম্পূর্ণ হকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে মেয়রের প্রতি আহবান জানান। যে ব্যবসায়ীরা দোকানের সামনে হকার বসান তাদের লাইসেন্স বাতিল করা ও যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশা যাতে যাত্রী উঠানামা না করতে পারে সেজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়র কেন একা হকার উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন? কাউন্সিলররা চাইলেই ওর্য়াডভিত্তিক কাজ করে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন। তারা যদি নিজ নিজ এলাকা সুন্দর করে রাখতেন, তাহলে সিলেট নগরী আজ নোংরা থাকত না। যে কাউন্সিলর নিজ এলাকা সুন্দর করে রাখবেন, তার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করলে তারা অনেকে উৎসাহী হয়ে কাজ করবে বলে মনে করেন বক্তারা।

সভায় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা মেয়র আরিফের প্রশংসা করে বলেন, মেয়র সিলেটের উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে কাজ করছেন। মেয়রের কাজে কেউ বাঁধা দিলে তা নগরবাসী মেনে নেবে না। সকল কাজে মেয়রকে দোষারোপ করলেও হবে না। আমরা নাগরিকদেরও কিছু কাজ আছে। উন্নয়ন কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করতে মেয়রকে সকলের সহযোগিতা করতে হবে।

সভায় বক্তব্য দেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট এর সভাপতি আব্দুল করিম কিম, জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া, সিলেট চেম্বারের সহসভাপতি তাহমিন আহমদ, সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মিশফাক আহমদ মিশু, মহিলা চেম্বারের সভানেত্রী স্বর্ণলতা রায়, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক, ইমাম সমিতির নেতা মাওলান সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত