রিপন দে, মৌলভীবাজার

০৪ জানুয়ারি, ২০২০ ১৫:২৪

একটি ইট ভাটার কারণে দুর্ভোগে ২০ হাজার মানুষ

পিচডালা পাকা রাস্তা কিন্তু দেখে বুঝার উপায় নেই এটি পাকা রাস্তা। জায়গা বিশেষে ২ থেকে ৫ ইঞ্চি মাটির আস্তরণ পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা রাস্তা হয়ে যায় কর্দমাক্ত, নয়তো ধূলায় ঢাকা। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ১০ টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ৭টি  স্কুলের শিশুদেরও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ১ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মুরালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরেডিয়ান স্কুল, মুন্সিবাজার হাইস্কুল, কলাগাও হাইস্কুল এবং মুশুরিয়া মাদ্রাসাসহ ৭/৮ টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ  কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত। সেই সাথে মুরালী, বালিগাও, দুগাও, পইতুরা, বাঙ্গালী গাও, আলিসের গাও এবং জামুরাসহ আশেপাশের ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলে একমাত্র রাস্তা এটি।  কিন্তু স্কুল মাদ্রাসার পাশে গড়ে উঠা “কাজী খন্দকার ব্রিকস” নামের একটি ইটভাটার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই অঞ্চলের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ।   

দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী এই সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর, আবেদন করলেও কোন সমাধান মিলেনি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক ও ট্রলি গাড়ীতে ভরে মাটি যাচ্ছে রাজনগর সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামে অবস্থিত কাজী খন্দকার ব্রিকস নামের ইট ভাটায়। সারা বছর পাকা রাস্তার উপর দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি পরিবহনের কারণে পাকা রাস্তার উপর দুই থেকে ৫ইঞ্চি পর্যন্ত মাটির স্তূপ পড়েছে।  জমে থাকা এই মাটির কারণে শুক্রবার ভোর রাত থেকে বৃষ্টির কারণে পাকা রাস্তার পুরোটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। এই রাস্তা দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করতে পারছেন না।

এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, বৃষ্টি হলে কাদা আর বৃষ্টি না থাকলে ধুলাবালি সেই সাথে ইট ভাটায় প্রতিদিন মাটি বহনকারী ট্রাকের শব্দে তারা পড়েছেন মহা বিপাকে। অভিযোগ রয়েছে, ফসলের উর্বর জমি এমনকি বন্যা প্রতিরোধের বাধ কেটেও মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

বালিগ্রামের বাসিন্দা জুবায়ের আহমদ জানান, প্রতিদিন বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রে শহরে যাবার পথে ধুলাবালি আর কাদার সাথে যুদ্ধ করতে হয়। বড়রা কোন ভাবে চলতে পারলেও শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না।  আশেপাশের ২০ হাজার মানুষের এই দুর্ভোগ নিয়ে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত কথা বললেও কোন লাভ হচ্ছে না।  

স্থানীয় যুবক আব্দুর রব জানান, কাদা মারিয়ে চলাচলের কারণে ৭/৮টি গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী মহাবিপাকে। ইটভাটার ট্রাক দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়ার সময় কাদাযুক্ত পানি কাপড় নষ্ট করে ফেলে।  আমরা বড়রাসহ ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জমিনে নেমে ওই স্থান অতিক্রম করতে হয়৷ ইটভাটাটি করা হয়েছে আইন না মেনে জনবসতিতে সেই সাথে ফসলের মাঠ এবং এবং ছড়ার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

মুশুরিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী লুবনা বেগম বলেন, প্রতিদিন মাদ্রাসায় হেঁটে যাওয়ার সময় এইসব ট্রাক দ্রুত গতিতে যায়। তখন তারা রাস্থা ছেড়ে পার্শবর্তি জমিনে নেমে পড়েন৷

এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা জানান, এই ইটভাটার সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে কাগজ পত্র যাচাই করে আমরা যা পেয়েছি তাতে এই ইটভাটাটির কাগজ পত্রে প্রচুর সমস্যা পেয়েছি। আগামী সপ্তাহেই আমরা ব্যবস্থা নেব প্রয়োজনে ইটভাটা ভেঙ্গে দেওয়া হবে। এই ভাটার কাগজপত্রে যেমন সমস্যা আছে তেমনি তারা ইট তৈরী করে সনাতন পদ্ধতিতে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত