বড়লেখা প্রতিনিধি

১২ জানুয়ারি, ২০২০ ১৯:১৬

স্মৃতির আঙিনায় মিলনের সুর

বড়লেখায় লাইসিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী

ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকাল। সাথে শীতের হিম বাতাস। এই শীতকে উপেক্ষা করেই স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জড়ো হতে থাকেন খোলা মাঠের ভেতর স্কুল ক্যাম্পাসে। এখানে তখন ছড়িয়ে পড়ছে উষ্ণতা। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে অপরকে দেখে আনন্দে-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। সময় বাড়ার সাথে সাথে ভিড়ও বেড়েছে। প্রাণের বন্যা তখন পুরো অঙ্গনে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) ছিল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার রোকেয়া খাতুন লাইসিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের রজতজয়ন্তী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী। রজতজয়ন্তী উপলক্ষে শুধু স্কুল ক্যাম্পাসই না, বড়লেখা শহরকেও ব্যানার তোরণে রাঙানো হয়েছে। রং-তুলিতে সাজানো হয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণ ও এলাকার সড়ক। রাত এগারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে।

শিক্ষার্থীদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল পুরো ক্যাম্পাস। শৈশবের খুঁজে তারা ছুটে এসেছেন স্মৃতির আঙিনায়। স্মৃতির পথে আরেকবার হাঁটতে এসেছেন সবাই। কথায়, আড্ডায় সবাই ছিলেন মুখর। হয়তো অনেকদিন পর দেখা বন্ধুর সাথে বন্ধুর, সতীর্থদের সাথে সতীর্থের। শুধু এ দিনটি উপলক্ষেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শেকড়ের টানে ছুটে আসেন বিদ্যালয়ে। পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সবাই মেতেছেন হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতিচারণা আর আড্ডায়। আবার কেউ কেউ গল্পগুজবের সঙ্গে সেলফি-ছবি তুলে মুহূর্তটা স্মরণীয় করে রাখছেন। একদম শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই রাঙিয়ে তুলেছিলেন উৎসবের প্রাঙ্গণটি।

উৎসবের সকালে বের করা হয় রঙিন শোভাযাত্রা। হাতি-ঘোড়াসহ শোভাযাত্রাটি স্কুলের নতুন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা প্রদক্ষিণ করে। তখন মাইকে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের কন্ঠছাড়া গান। ভুবুজেলার সুর। শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল নানা ‘আগের সেই শিক্ষা নেই, আগের সেই শিক্ষক নেই’ ইত্যাদি স্লোগানের ফেস্টুন।

শোভাযাত্রা শেষে উৎসব মঞ্চে পরিবেশন করা হয় উৎসব সংগীত, বিদ্যালয় সংগীত, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন গান। পরিবেশন করা হয় মণিপুরি নৃত্য ও গান। প্রদর্শন করা হয় স্কুলের ইতিহাস সম্বলিত তথ্যচিত্র। এরপর প্রধান অতিথিসহ অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রজতজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন।  

রজতজয়ন্তী উপলক্ষে স্কুলের নতুন ক্যাম্পাসে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রোকেয়া খাতুন লাইসিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি, রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি ও বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী।

শামীম আহমদ ও টুম্পা দাসের যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান।

স্মৃতিচারণা করে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফাহিম আহমদ হামিম বলেন, ‘স্কুল ছেড়েছি কয়েক বছর আগে। এটি আমার আবেগের স্কুল। পুরনো সবার সাথে দেখা হচ্ছে। খুবই ভালো লাগছে।’

রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি ও বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়টি শুধু জেলাতেই না, সিলেট বিভাগের মধ্যে ফলাফল ভালো করছে। অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে। এই উৎসব সম্পন্ন করতে অনেক মানুষ আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে দেশের মধ্যে অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইসিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজকে গড়ে তোলা।’   

বিকেলে ছিল স্মৃতিচারণ, কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত এগারোটা পর্যন্ত ব্যান্ডদল শিরোনামহীন গান পরিবেশন করে। বড়লেখা উপজেলায় এই প্রথম ছিল কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম জাঁকজমকপূর্ণ ও অন্যরকম আয়োজন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত