তাহিরপুর প্রতিনিধি

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৮:২৯

তাহিরপুরের লালুর গোয়ালা বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের লালুর গোয়ালা বাঁধ। এই বাঁধের স্থান জামালগঞ্জ উপজেলা অংশে হলেও হাওরের ৮০শতাংশ বোরো ফসল তাহিরপুর উপজেলার কৃষকদের। এজন্য সার্বক্ষণিক তাহিরপুরের কৃষকদের নজরে থাকে লালুর গোয়ালার দিকে। তাই চলমান বাঁধের কাজে কোনো ধরনের অসঙ্গতি হলেই প্রতিবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

স্থানীয় তাহিরপুরের কৃষকদের অভিযোগ, লালুর গোয়ালা ক্লোজার বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সেই সাথে বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়মের করা হচ্ছে। বাঁধের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলার কারণে এপর্যন্ত মাত্র ৪০শতাংশ কাজ হয়েছে। এছাড়া বাঁধের প্যালাসাইডিংয়ের জন্য বাঁশ ও দাড়া ধরা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্প সাইটে এগুলো দেখা যায়নি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল স¤প্রতি এই বাঁধের কাজ পরিদর্শন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।

গত দু’বছর ধরে এই বাঁধটি ভেঙে শনির হাওরের সম্পূর্ণ ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই এলাকার হাজার হাজার কৃষক সারাক্ষণই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মাঝে থাকেন।

লালুর গোয়ালা প্রকল্প স্থানে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি স্থানীয় শ্রমিক দ্বারা কাজ করাচ্ছে। মাটি ফেলা হচ্ছে কিন্তু দুরমুজ করছেন না। নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কাজ হচ্ছে না।

প্রকল্প সভাপতি লাল মিয়া বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছি।  

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে রয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমি। তার মধ্যে ৮০শতাংশ জমি রয়েছে শনির হাওরে তাহিরপুর উপজেলায় কৃষকদের। আর বাকি ২০শতাংশ রয়েছে বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের। এ ক্লোজার বাঁধটি জামালগঞ্জ উপজেলার রাধানগর মৌজায় অবস্থানের কারণে সেটি নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান বেহেলী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লাল মিয়া। এ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ দেয় ১৭লাখ ৮৪হাজার ৯৭৯টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এর মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে মর্মে কার্যাদেশ দেয়।

শনির হাওরপাড়ের সাহেবনগর গ্রামের কৃষক বিমল সরকার বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হলে যে কোনো সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়বে।

লালুর গোয়ালা ক্লোজার বাঁধের প্রকল্প সভাপতি বেহেলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য লাল মিয়া বলেন, বাঁধের ওপর দুরমুজ না করলেও কোনো সমস্যা নাই। ট্রাকের চাপায় মাটি দুরমুজ হয়ে যায়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে। বাঁধে মাটির কাজ শেষ হলেই প্যালাসাইডিংয়ের জন্য বাঁশ ও দাড়া নিয়ে আসা হবে।

শনির হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় লালুর গোয়ালা বাঁধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ্য করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবির বলেন, ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আশা রাখি কাজটি সমাপ্ত হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে এ বাঁধটিতে আমরা নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, শনির হাওরের ক্লোজার বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স¤প্রতি বাঁধের কাজ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পর কাজের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।      

আপনার মন্তব্য

আলোচিত