তাহিরপুর প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল, ২০২০ ১৭:০০

ঝুঁকি নিয়েও বোরো ফসল কাটছেন কৃষকরা

বোরো ফসল ঘরে ওঠানোর লক্ষ্য নিয়ে হাওরপাড়ে হাজার হাজার কৃষক এখন কাজ করছেন। কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, পাহাড়ি ঢলে কষ্টের ফলানো সোনার ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবার। তার উপর মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে করোনার ভয় উপেক্ষা করেই পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে কৃষকরা কাজ করছেন ফসল ঘরে তোলার।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চলছে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। চলমান করোনা মোকাবিলায় যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন সেখানে কাছাকাছি থেকেই প্রতিটি পরিবারের শিশু, ছেলে, নারী, পুরুষ, বুড়ো সবাই মিলে ব্যস্ত রয়েছেন ধান কাটা-মাড়াইয়ে।

প্রতিটি পরিবারের কাছে ধান কাটা মাড়াই ও ঘরে তোলাই এখন মূল লক্ষ্য। তাই করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সঙ্কট ছাড়া তেমন কোনও প্রভাব পড়ছে না হাওরপাড়ের গ্রামগুলোতে।

উপজেলার ভাটি তাহিরপুর, শুবলারগাঁও, মানিকখিলা, পাঠাবুকা, রতনশ্রী, ঠাকুর হাটি, হুসেনপুর, সীমানা, নতুন বাজার, শ্রীপুরসহ শনির ও মাটিয়ান হাওরসহ বিভিন্ন হাওরপাড়ের গ্রামের সামনে ধান মাড়াই খলাতে গিয়ে দেখা যায় এমনি চিত্র।

প্রতিটি পরিবারের লোকজন পাশাপাশি থেকে ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ধান মাড়াই মেশিনে ধানের মুঠি দিচ্ছেন, কেউ ধান উড়াচ্ছেন, আবার কেউ খড়কুটো নাড়ছেন। বাদ পড়ছে না পরিবারের ছোট শিশুটিও।

কৃষক রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, করোনা আতঙ্কে ঘরে বসে থাকলে ধান কাটা-মাড়াই দেয়া যাবে না। ঘরে ফসল তুলতে হবে। ঘরে ফসল উঠলে বছরের খাদ্য নিশ্চিত হবে। না হলে ঘোলা শূন্য। ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

রিয়াদুল মিয়া জানান, শ্রমিক নেই, পেলেও মজুরি বেশি। আর আগে তো শ্রমিক আসত দল বেঁধে আর এখন শ্রমিকই আসে না। আর বর্তমান করোনার কারণে শ্রমিক সঙ্কটে মহাবিপদে আছি। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়েই কাজ করছি। ইচ্ছা করলেও অনেক কাজ দূর থেকে করা যায় না। পাশাপাশি-কাছাকাছি থেকেই করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, আমরা সব সময় কৃষককে নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। কষ্টের ফলানো সোনার ফসল ঘরে তুলার জন্য ঝুঁকি নিয়ে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই করছেন। আমরা কৃষকদের বলেছি যতটুকু পারেন দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, করোনা আতঙ্কের মধ্যেও হাওরপাড়ের অনেক কৃষক কাজ করছেন। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। আমরা সবাইকে বলছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে। কিন্তু এ অবস্থায় একটু ঝুঁকি নিয়ে হলেও বোরো ফসল কাটতে হবে। এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত