নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:২২

করোনা আক্রান্ত 'ভুল নারীকে' নিয়ে সিলেটে দিনভর নানা নাটকীয়তা

সিলেট করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক নারীকে নিয়ে শুক্রবার দিনভর নানা নাটকীয় কাণ্ড ঘটে গেলো। শেষে জানা গেলো, আক্রান্ত নারীকে রাত পর্যন্ত খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এখনও তার সন্ধান চলছে। এর আগে ভুল নারীকে ধরে এনেছিলো পুলিশ।   

সিলেট এসএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের এক নারীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর জানা যায় বৃহস্পতিবার রাতে। এরপর গাইনি ওয়ার্ডে খোঁজ নিতে গিয়ে ওই নারীকে খোঁজে পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সাথেসাথে হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশকে জানানো হয় এ তথ্য। হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানানো হয়, করোনা শনাক্ত হওয়া ওই নারী হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন। তার বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের রঙিটিলায়।

এরপর রাতভর ওই নারীর খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। শুক্রবার সকালে রঙিটিলা থেকে আমেনা নামের এক নারীকে ধরে আনে পুলিশ। দুদিন আগে তিনি ওসমানী হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের পরই ওই সন্তান মারা যায়।

বিজ্ঞাপন



থানায় নিয়ে আসার পর ওই নারী জানান, তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাকে বৃহস্পতিবার সকালে ছাড়পত্র দিয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন বলেও জানান।

এরপর তাকে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে প্রেরণ করে পুলিশ।

তবে করোনা সন্দেহভাজন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘটনায় ওসমানী হাসপাতালে শুরু হয় তোলপাড়। ওই ঘটনার তদন্তে নামে হাসপাতাল প্রশাসন। তদন্তে বেরিয়ে আসে আরেক নাটকীয় তথ্য। পুলিশ যে নারীকে ধরে এনেছে তিনি নাকি করোনাভাইরাস আক্রান্ত নন। যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তাকে এখনও খোঁজেই পাওয়া যায়নি।

ওসমানী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের গাইনি বিভাগে সদর উপজেলার বিমানবন্দর থানা এলাকার দুইজন প্রসূতি ভর্তি হন। দুজনের নামই আমেনা। দুজনের সন্তান প্রসবের পর মারা যায়। এরমধ্যে এক আমেনাকে বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া অপর আমেনা হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। তবে তিনি সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বৃহস্পতিবার কোনো এক সময়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।

বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসায় খোঁজ পড়ে আমেনার। তাকে না পেয়ে শুরু হয় তোড়জোড়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। তারা শুক্রবার সকালে পালিয়ে যাওয়া আমেনার বদলে ছাড়পত্র নিয়ে যাওয়া আমেনাকে ধরে নিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহদাৎ হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিলো সেই ঠিকানা অনুযায়ী গিয়েই আমরা এই নারীকে নিয়ে আসি। ওই নারীর বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে তিনি করোনা আক্রান্ত নন। করোনা আক্রান্ত অন্য নারী। তবে এই নারীর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা আমাদের দেওয়া হয়নি। কেবল মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। আমরা মোবাইল নম্বর ধরে তার অবস্থান নিশ্চিতের চেষ্টা করছি।

বিজ্ঞাপন



এ ব্যপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, পুলিশ ভুল নারীকে ধরে এনেছে বলে আমিও শুনেছি। শনিবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবো।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, যে নারীকে পুলিশ নিয়ে এসেছে তিনি অনেকটা সুস্থ ছিলেন। তাই তাকে হাসপাতালে না রেখে আমরা বাড়িতেই আইসোলেশনে রেখেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত