বড়লেখা প্রতিনিধি

২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০১

বিনা খরচে কৃষকের ঘরে উঠছে ধান

বড়লেখায় ধান কাটছেন ছাত্র-যুবক, পেশাজীবী ও ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা

ধানখেতের আলে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষক হরিবল দাস। তার খেতের পাকা বোরো ধান কাটছেন ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ। প্রায় ২ ঘন্টার মধ্যে ৩ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ। যারা ধান কাটছেন, তাদের কোনো পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে না। কারণ তাঁরা কেউ কৃষি শ্রমিক নন। এদের কেউ ছাত্র-যুবক আবার কেউ স্কুল শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মী। আছেন ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগকর্মী। গত কয়েকদিনে কৃষি বিভাগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা নেমেছেন কৃষকের ধান কাটতে। ধান কাটার পাশাপাশি তারা কৃষকের ধান মাড়াইও করে দিচ্ছেন।

কৃষক হরিবল দাসের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরপাড়ের পূর্বগগড়া গ্রামে। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) হরিবল দাসের মত এলাকার অন্তত ৩ জন কৃষকের ৮ বিঘা জমির ধান কেটে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে ধান কাটা শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন


 
হরিবল দাস বলেন, ‘৩ বিঘা জমির ধান কাটতে আমার প্রায় ৩ হাজার ৬’শত টাকা লাগত। কিন্তু আমার এক টাকাও খরচ হচ্ছে না। স্যার, ছাত্র ও নেতারাসহ অনেকে ধান কেটে দিচ্ছে। খেতেই ধান মাড়াইয়ে সহযোগিতা করছেন তারা। কাটার খরচ ছাড়াই ধান ঘরে তুলতে পারছি। আমার কষ্ট করতে হয়নি। কত মানুষ আনন্দে ধান কাটতেছে। ধান কাটা দেখতে ভিড়ও করছেন অনেক মানুষ।’

কৃষিবিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন মিলিয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। আবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৪৬৮ হেক্টর। কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ১০৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রর চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে হাকালুকি হাওর পাড়ের তিন ইউনিয়ন তালিমপুর, সুজানগর ও বর্ণিতে। অন্য ৭টি ইউনিয়নেও কম-বেশি ধান আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধারা হয়েছে ২৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কায় কৃষি বিভাগ যেখানে ধান পাকছে, সেখানেই দ্রুত সময়ে কৃষককে ধান কাটতে উৎসাহিত করেছে। প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। ৮০% পরিপক্ক হলে দ্রুত ধান সংগ্রহের আহ্বানও জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বোরো ধান কাটা নিয়ে কৃষক যাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে না পড়েন, সে জন্য গত কয়েকদিন থেকে কৃষি বিভাগ কৃষক পরিবারের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালায়। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-যুবক, স্কুল শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগকর্মীরা মাঠে নেমেছেন ধান কাটতে। এরা সকলেই বিভিন্ন এলাকার কৃষক পরিবারের মানুষ। করোনাভাইরাসের কারণে পেশাজীবী অনেকের ছুটি হয়েছে। কোনো কাজ নেই। তাই তাঁরা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ধান কাটতে যাওয়া ব্যবসায়ী শ্রীবাস চন্দ্র দাস শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কৃষি বিভাগ থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছে। কৃষকের ধান কাটতে সহযোগিতার জন্য। ধান যে; কউ কাটতে পারবে না। কৃষক পরিবারের মানুষ ছাড়া। তাই আমরা সকলে উদ্যোগ নিয়ে ধান কাটছি। দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছি। এতে তাদের টাকা খরচ হচ্ছে না। কৃষককে তেমন পরিশ্রম করতে হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন



শিক্ষক সজল সরকার বলেন, ‘কৃষি বিভাগ প্রচারণা চালিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা বিভাগ থেকেও কৃষকের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। আমরা গ্রামের মানুষ। বেশিরভাগ কৃষক পরিবারের সদস্য। এ জন্য কৃষকের কষ্টটা বুঝি। উৎসাহ নিয়ে সকলে ধান কাটতেছে। তালিমপুরসহ আশপাশের ইউনিয়নের সকল কৃষককে ধান কাটতে সহযোগিতা করব।’

বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বলেন, ‘শ্রমিক সংকট নেই। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই কৃষক যাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে না পড়েন, সে জন্য গত কয়েকদিন থেকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালাই আমরা। ছাত্র-যুবক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগসহ মানুষ কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। উৎসবের মত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধান কাটছেন। এতে কৃষকের ধান কাটার খরচ লাগছে না। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সবাই সহযোগিতা করছে। এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তবে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এতে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। কৃষকের ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রয়ে ও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করি। এছাড়া বোরোর পাশাপাশি আউশ আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। বীজতলা তৈরি হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত