সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২৮ এপ্রিল, ২০২০ ১২:৩১

যে পরামর্শ দিলেন সুনামগঞ্জের করোনাজয়ী যুবক

করোনাভাইরাসে যেখানে মৃত্যুর মিছিল সেখানে এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্পটাও হয় অন্যরকম। ঠিক তেমনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আসেন ঢাকার একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরী করা যুবক সজিবুর রহমান। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও তার থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। যার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি।

শুরুতে তিনি সকল চিকিৎসক ও নার্সদের স্যালুট দিয়ে বলেছেন, ওনাদের কাছে আমি ঋণী ও চিরকৃতজ্ঞ। তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সেবা করে যাচ্ছেন।

তিনি তার গল্পের শুরু করে বলেন, ''আমার শরীরে কোন ধরনের কোভিড-১৯ এর উপসর্গের লক্ষণ ছিল না। ঢাকা থেকে আমাকে একটি টেস্ট করানো হয়েছিল। কিন্তু উক্ত টেস্টে আমার কোনো মতামত ছিল না এবং আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে টেস্টটি করানো হয়েছিল। পরে আমি ওই দিনই আমি আমার গ্রামের বাড়ি (বিশ্বম্ভরপুর) চলে আসি কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ নিয়ম মেনে, মুখে মাস্ক, দুই হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরে এবং সাথে ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যদি আমার পজিটিভ হয়? সেই ভয়ে। আমার দ্বারা যে অন্য কারো ক্ষতি না হয় সেইভাবে আমি আমার বাড়িতে পৌঁছেছি।''

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও লিখেন, 'যেহেতু আমি ঢাকাফেরত তাই থানা এবং চেয়ারম্যানকে অবগত করে আমি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ নিয়ম মেনে ১৪ দিনের হোম কোরায়েন্টিনে থাকব। আলাদা একটি বাড়িতে অবস্থান করি, আমি কারও সাথে মিশি নাই, দূর থেকে ওয়ান টাইম বক্সে খাবার সংগ্রহ করে খেয়েছি। দুই দিন এবং দুই রাত আবস্থান করি ওই আলাদা একটি নতুন বাড়িতে। তারপর ১৫ এপ্রিল রাতে আমাকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে আসার পর আমি জানতে পারি আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ, ঢাকার রিপোর্ট অনুযায়ী। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, মহান আল্লাহতালার উপর আমার দীর্ঘ বিশ্বাস ছিল আমার কিছু হবে না। যাই হোক আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে হাসপাতালে আমি থাকতে শুরু করলাম। ভর্তির ৭ দিন পর আমার একটি টেস্টের নমুনা দেয়, সেই রিপোর্টে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। তার কয়েকদিন পর আরেকটা নমুনা নেওয়া হয় সেখানেও কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। তারপর আমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয় এবং বলে তুমি কোভিড-১৯ মুক্ত। তখন খুশিতে আমার মনটা ভরে যায়, আর বলতে থাকি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমার খুশির খবরটা।

তিনি সকলকে করোনাভাইরাস হলে ঘাবড়ে না গিয়ে ও ভয় না পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে ঘাবড়ে যাবেন না, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু ১৪ দিন নিয়ম মেনে চলুন, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। দেখবেন ১৪ দিন পর আপনার কোভিড-১৯ নেগেটিভ চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে আমি ১২ দিন থাকি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য। উক্ত ১২ দিন আমি যা যা করছি তা বর্ণনা দিলাম। প্রতিদিন আমি ৩-৪ বার গরম পানি পান করতাম। গরম পানির সাথে লেবুর রস এবং পরিমাণমত লবণ দিয়ে গড়গড়া কুলি করতাম এবং গরম পানি পান করতাম এবং ডাক্তার স্যার এবং নার্স আপুদের নিয়ম ও পরামর্শ অনুযায়ী থেকেছি। প্রতিদিন হাসপাতালে নিয়ম ও মেনু অনুযায়ী সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার দিয়েছে। প্রতিদিন এক বার রং চা পান করতাম। সাথে ছিল আদা, এলাচ, দারুচিনি। ভিটামিন-সি ট্যাবলেট দিনে দুই বার খেয়েছি সকাল এবং রাতে। প্রতিদিন একটা করে মাল্টা খেয়েছি ও প্রতিদিন ১.৫ লিটার গরম পানি এবং ২ লিটার নরমাল পানি পান করেছি।

উল্লেখ্য, সোমবার সকালে ২৫০ শয্যা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে সুনামগঞ্জের দুইজনকে সুস্থ ঘোষণা করে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। তাদের নমুনা রিপোর্ট পরপর দুইবার নেগেটিভ আসলে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে আরও ১৪ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, শাল্লা উপজেলায় ৩ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২ জন, ছাতক উপজেলায় ২ জন এবং দিরাই উপজেলায় ১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত