হোসাইন আহমদ সুজাদ

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০৩

জকিগঞ্জে সরকারি চাল লুটের নেপথ্যে আওয়ামী লীগ নেতা!

সিলেটের জকিগঞ্জে ওএমএস’র চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই কালীগঞ্জ বাজারে নিয়ে গিয়েছিল ডিলাররা। মিল মালিক, ট্রাক চালকরাও সম্পৃক্ত ছিলো এতে। আত্মসাতের ঘটনা আড়াল করতেই চালানো হয় লুটপাটের নাটক। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজশে চাল আত্মসাত করা হচ্ছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৬ এপ্রিল জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে লুকিয়ে গোডাউনে মজুদকালে চাল ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে স্থানীয় জনতা। এরপর আচমকা ট্রাক থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব ওএমএস কর্মসূচির এসব চাল লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক মিল মালিকসহ ৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খোলাবাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির এই চাল সিলেট থেকে ট্রাক যোগে সরাসরি জকিগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নিয়ে যাওয়া হয় কালিগঞ্জ বাজারে। কালিগঞ্জ বাজারের এক গুদামে চালগুলো লুকিয়ে রাখার সময় জনতা আটক করে। এ সময় চাল আত্মসাতের ঘটনা আড়াল করতে লুটপাট চালানো হয়। জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সওদাগর সেলিমের যোগসাজশে চাল আত্মসাতের চেষ্টা চালানো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেলিম।

তবে ২৬ এপ্রিল লুটপাটের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সওদাগর সেলিমের মালিকানাধীন মার্কেটের গুদাম থেকে ১৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন



এ বিষয়ে সওদাগর সেলিম বলেন, আমার গুদাম থেকে চাল উদ্ধার হলেও আমি গুদামটি ডিলার জয়নাল আহমদের কাছে ভাড়া দিয়েছি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে।

এদিকে, এখন পর্যন্ত লুট হওয়া সব চাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সুত্রে জানা যায়, ডিলাররা ব্যংকে ৬৮৪ টি বস্তা চালের মূল্য জমা দিলেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে ৩৪৬ বস্তা বাজার। যদিও গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ট্রাকে ৫৭০ বস্তা চাল ছিলো। ফলে এখনও ১১৪ বস্তা চাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

চাল আত্মসাতের চেষ্টা ও লুটপাটের ঘটনায় জকিগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুমানা আফরোজ বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সিলেটের গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স মেঘনা অটো রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী শফিকুল ইসলামসহ ৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন- ডিলার আব্দুল মুকিত, ডিলার জয়নাল আহমদ, আব্দুল আজিজ, ট্রাকচালক কামরুল ইসলাম, সইফ উদ্দিন, দেলওয়ার হোসেন ও বিপ্লব আহমদ। ইতোমধ্যে এদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুুলিশ।

বিজ্ঞাপন



মামলার এজাহারে বাদী রুমানা আফরোজ উল্লেখ করেন, ডিলারদের বিক্রয়কেন্দ্রে চাল পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও মেঘনা রাইস মিলের মালিক শফিকুল ইসলাম ও আটক অন্যান্য ডিলারসহ অপরাপর আসামিদের পরস্পর যোগসাজসে কালিগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুল মুকিতের চালের আড়তে ও আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম সওদাগরের নিয়ন্ত্রণাধীন জয়নাল আহমদের চালের গুদামে অবৈধভাবে চাল মজুদ করেছিলেন। আটককৃত আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে চালানে বর্ণিত চালের বস্তার ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তারা একেকজন একেক কথা বলছেন। আসামিরা খাদ্য অধিদপ্তরের চাল সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে বিক্রিয়ের জন্য ট্রাকে করে কালিগঞ্জে এনে মজুদ করেছিলো বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, সরকারি এই চাল জকিগঞ্জে আসার কথা আমি জানতামই না। এমন কি আমার উপজেলা খাদ্য অফিসও জানতো না। এগুলো গোপনে নিয়ে আসা হয়েছে।

সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী বলেন বলেন, সমগ্র বিষয় টি তদন্ত করার জন্য আমরা তিন জন প্রথম শ্রেণীর অফিসার দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এর সঙ্গে মিলার বা ডিলার যেই জড়িত হোক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেট জেলা পুলিশের জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদিপ্ত রায় বলেন, যার নির্দেশে চাল লুট করা হয়েছে আমরা তাকে খুঁজছি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি তদন্তের মাধ্যমে সব বেরিয়ে আসবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত