বেনা‌পোল প্রতিনিধি

০৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:৪৭

শার্শায় ভুয়া এনজিও গ্রাহকদের ১৫ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট

যশোরের শার্শায় ‘গ্রামীণ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামানত ও গ্রাহকদের সঞ্চয়ের প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে নাভারন জেএস মার্কেটের মালিক পক্ষ জড়িত বলে অভিযোগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে এপিএ মনিরা খাতুন ।

জানা যায়, ‘গ্রামীণ পল্লী উন্নয়ন সংস্থার’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বিভাগীয় নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেন খান অক্টোবর মাসের ১০ তারিখে নাভারণ জেএস মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম শুরু করেন । পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় যাহার এম.আর.সনদ নং-০৩৯০৫-০০৫০৭-০০০২৪। আকর্ষণীয় বেতন ভাতার প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ করে নিয়ম অনুযায়ী ২৫ তারিখের মধ্যে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। চাকুরিতে জামানত বাবদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট হতে বিভাগীয় নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেন খান ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫শ’ টাকা গ্রহণ করেন ।

মাঠ কর্মীরা কাজে যোগদান করে বিভিন্ন গ্রামের ৮৩ জন অভাবী মানুষের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় বাবদ ১লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ টাকা আদায় করেন । ঐ সমুদয় টাকা তুলে আমজাদ হোসেনের কাছে জমা দেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে । গ্রাহকবৃন্দকে বুধবার ঋণ দেওয়া হবে বলে জানানো হয় । কিন্তু ঋণ দেওয়ার পূর্বে মঙ্গলবার রাতে ওই কর্মকর্তা অফিসের ভিতরে থাকা আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায় কৌশলে। পরের দিন সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে তালা খুলে দেখে ঘরে কিছু নেই। কিছু পরে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময়ে আসে তাদের আকাঙ্ক্ষিত ঋণের টাকা নিতে। গ্রাহকরা এসে বিষয়টি শুনতে পায় এবং তারা তখন মাঠকর্মীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এর পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমজাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি ।

গ্রাহক উলাশী গ্রামের বাসুদেব জানান, ৯% হার সুদে আমাদের ৫০ হাজার টাকা দেবে আর এজন্য আমি সঞ্চয় বাবদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছি । এখন দেখছি সব মিথ্যা এবং এই অবস্থায় আমার বাড়ীতে অশান্তি চলছে ।
গ্রাহক উলাশী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মতলেব জানান, আমাকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা জামানত দাবি করেন । আমি জামানত বাবদ ২৭ হাজার ৫ শত টাকা দিয়েছি। এখন আমার কি হবে ?
নাভারণ মডেল প্রেস মালিক সেলিম জানান, আমার সঞ্চয়সহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে ।

গ্রামীণ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা শার্শা উপজেলা শাখার হিসাব রক্ষক রাসেল রেজা বলেন, কিস্তিতে গ্রাহকদের মাঝে ফ্রিজ, টেলিভিশন, প্রেসার কুকার, রাইস কুকারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নাভারণ বাজারের রিফাত এন্টারপ্রাইজ থেকে ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বাকিতে নিয়ে অফিসে রেখে দেয় । পরে সেগুলো আর পাওয়া যায়নি ।

সংস্থার মাঠকর্মী পারভীন আক্তার জানান, ১৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৭৭ হাজার ৩ শত টাকা এবং নিজের জামানত ২৫ শত টাকা অফিসে জমা দিয়েছি । তার নাম আমজাদ হোসেন খান । লোকে বলছে ফেসবুক আইডি'তে তার নাম এম ডি মেহেদি । আমি সহজ সরল গরীব মানুষ, লোকের টাকা তুলে দিয়েছি আর এখন তারা টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আমার বাড়িতে আসছে । আমি এই প্রতারকের উপযুক্ত বিচার আশা করছি ।

অপর আর একজন মাঠ কর্মী ফরিদা খাতুন জানান, আমি আমজাদ হোসেনের কথা অনুযায়ী ৩/৪ সপ্তাহ সঞ্চয়ের টাকা বাবদ গ্রাহকের নিকট হতে ১৫'শ থেকে ২'হাজার করে টাকা নিয়ে জমা দিয়েছি । তার বাড়ী নাকি যশোরের কাঠালতলায় ।
এ ঘটনায় স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও গ্রাহকরা একযোগে শুক্রবার সকালে উপজেলার নাভারন জেএস মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘গ্রামীণ পল্লী উন্নয়ন সংস্থার’ অফিস কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন । সাংবাদিক সম্মেলনে ‘গ্রামীণ পল্লী উন্নয়ন সংস্থার’ এপিএ মনিরা ইয়াসমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংস্থার বিভাগীয় নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেন খান শার্শা উপজেলা শাখা অফিসের জন্য লোভনীয় সুযোগ সুবিধার কথা বলে বিভিন্ন পদে ২৩ জনকে নিয়োগ দেন । তাদের কাছ থেকে চাকুরির জামানত বাবদ ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫শ’ টাকা গ্রহণ করেন । মাঠকর্মীদের নিকট থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ টাকা গ্রহণ করেন । মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই কর্মকর্তা অফিসের ভিতরে থাকা সকল মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায় । এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ হয় জেএস মার্কেটের মালিক জড়িত আছে। কোন আগাম টাকা ছাড়া, জাতীয় পরিচয় পত্র না দেখা এবং এরকম অবস্থায় থানায় কোন রকম ভাড়াটিয়াদের তথ্য প্রদান না করা সন্দেহের কারণ। তাহা না হইলে রাতে কিভাবে এসব মালামাল ট্রাক ভরে নিয়ে যায় ?

এ সম্পর্কে জেএস মার্কেটের মালিকের স্ত্রী লাবণী আক্তার জানান, আগাম টাকা নিয়েছি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে আমি শুধু তাদের ভাড়া দিয়েছি । কি মালামাল আসে আর কিনা আসে তা আমার জানার বিষয় না । আমি ঘটনা ঘটার পর শার্শা থানার ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেছি ।
প্রতিবেদককে আগাম টাকা নেওয়া বা জাতীয় পরিচয় পত্রের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি । থানায়  ভাড়াটিয়াদের তথ্য প্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত