সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ মার্চ, ২০২১ ২০:৪১

রাজাপাকসের মুখে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে রবীন্দ্রনাথের কবিতা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন আমন্ত্রিত অতিথি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। শুক্রবার বিকেলে এ উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এই শ্রীলঙ্কার এই রাষ্ট্রনায়ক।

বিকাল পাঁচটার পর মঞ্চে আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। শুরুতে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন। তুলে ধরেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইতিহাসও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূচনালগ্নে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে প্রথম সারির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন করে শ্রীলঙ্কা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি উল্লেখ করে করোনা মোকাবেলায় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন রাজাপাকসে। প্রধানমন্ত্রী তার পিতার নাম উজ্জ্বল করেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হোয়ার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার’ বা প্রার্থনা কবিতাটির কয়েক চরণ আবৃত্তি করেন। “চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য, উচ্চ যেথা শির/ জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর/ ... সেই স্বর্গে করো জাগরিত।”

রাজাপাকসে বলেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ইতিহাস রয়েছে। অনেকে মনে করে থাকেন, দুই হাজার বছর আগে বঙ্গ অঞ্চল থেকে মানুষ শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দী থেকেই দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য চলছে বলেও মনে করা হয়।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদাতা সামনের সারির দেশ হিসেব শ্রীলঙ্কার ভূমিকার কথা স্মরণ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন নীতিনিষ্ঠ মানুষ। বাংলার মানুষের জন্য তিনি তার সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন, এই বাংলার ভাষা এবং তাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য। স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এবং একটি নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। দুর্ভাগ্যবশত তিনি তার প্রিয়ে দেশের জন্য যে স্বপ্ন লালন করছিলেন তা দেখে যাওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে পারলেন না।”

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওইদিন এক জাতি তার নায়ককে, স্বাধীনতার জনককে হারিয়েছে। এক মেয়ে হারিয়েছেন তার পিতা, ভাই ও অন্য স্বজনদের।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার ও ত্যাগের প্রতি এটাই সর্বোচ্চ সম্মান।”

তিনি বলেন, “এই একুশ শতকে এসে আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা অর্জনে তাদের পূর্বসূরিদের সীমাহীন ত্যাগের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। একজন প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাশে থেকে কাজ করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে রাজাপাকসে বলেন, “বাংলাদেশের মাটি উর্বর এবং এখানকার মাঠে সোনার ফসল ফলে। আমাদের যে উর্বর ভূমি আছে তা বিশ্বের খুব কম দেশেরই আছে।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে তাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই দেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত