সদেরা সুজন, সিবিএনএ, কানাডা

২৯ আগস্ট, ২০১৬ ১০:০৭

কানাডায় গার্মেন্টস শিল্পের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ২২-২৪ শে অগাস্ট টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো "দি এ্যাপারেল টেক্সটাইল সোর্সিং কানাডা (ATSC) এক্সপো - ২০১৬" শীর্ষক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মেলায় বাংলাদেশ ১৪টি বুথ নিয়ে অংশগ্রহণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ'র সমন্বয়ে গঠিত ৩২ সদস্য-বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর। কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এ বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় করে।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে "ATSC এক্সপো - ২০১৬" রপ্তানি মেলায় যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত অংশগ্রহণকারী কোম্পানিসমূহের বুথগুলো ঘুরে দেখেন এবং রপ্তানিকারকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং কানাডায় পণ্য রপ্তানি ও নতুন বাজার সম্প্রসারণে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

রপ্তানিকারকরা সামগ্রিক এ আয়োজনে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন ও মান্যবর হাই কমিশনারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যিক ইউংয়ের প্রথম সচিব দেওয়ান মাহমুদ এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব কানাডা'র প্রেসিডেন্ট সুবীর কুমার দে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাফর ওসমান, ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল এ্যাক্রেডিটেশন প্রোডাকশন (WRAP) এর প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড সিইও এ্যভেডিস সেফারেইন, মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ - জে.পি. কমিউনিকেশনস ইনক্ ইউএসএ'র সিইও জেসন প্রেসকট ও মেলা পরিচালক জন ব্যাংকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রপ্তানি মেলার প্রথম দিনে লিড টাইম অপটিমাইজেশন, সোর্সিং, কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন এবং রিটেইল বিজনেস সংক্রান্ত ছয়টি বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং চীন থেকে আগত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এ সেশনগুলোতে বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। দুপুরে এক মনোজ্ঞ ফ্যাশন শো'র মাধ্যমে কানাডীয় মডেলরা তুলে ধরেন মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রকমারি ডিজাইনের তৈরি পোশাক। পরে আয়োজক সংস্থা জে.পি. কমিউনিকেশনস ইনক্‌ ইউএসএ কর্তৃক আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দেন বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর এবং অটোয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।  
আয়োজক সংস্থার সিইও জেসন প্রেসকট, টরন্টোর মিসিসাগার সাবেক মেয়র হেজেল ম্যাককালিয়ন, চাইনিজ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ -এর রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শাখার পরিচালক মি. চেন,  যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আমেরিকা ও বাংলাদেশের রপ্তানিমুখি শিল্পোদ্যোক্তারা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতা গ্রুপ ও মিডিয়া'র প্রতিনিধিগণ নৈশভোজে যোগদান করেন।

এসময় আয়োজক কর্তৃপক্ষ মেলায় বাংলাদেশের সফল অংশগ্রহণ ও দূতাবাস থেকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ মেলা আয়োজন ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ইতিবাচক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন আয়োজকবৃন্দ।  

মেলার দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারী রপ্তানিকারকদের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রেতা কোম্পানিসমূহের ওয়ান-টু-ওয়ান ম্যাচমেকিং বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ক্রেতা কোম্পানিসমূহও বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন স্পট অর্ডার প্লেস করেন। মোট ৪.৩৮ মিলিয়ন ডলারের স্পট অর্ডারের প্রতিশ্রুতি এবং ৩ লক্ষ ডলারের কনফার্ম অর্ডারর পান বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা। এ দিন একাদিক্রমে আটটি বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের উপর অনুষ্ঠিত সেশনটির শিরোনাম ছিলো 'Least Developed Countries - How Canadians Can Benefit'. এতে প্যানেল বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন কানাডার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন ডিপার্টমেন্টের সিইও স্টিভ টিপম্যান, মন্ট্রিয়লের সুপ্রসিদ্ধ টেক্সটাইল এক্সপার্ট এ্যাবি লিপম্যান এবং অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ। প্যানেল বক্তাগণ কানাডায় এলডিসি রাষ্ট্রসমূহের কোটামুক্ত-ট্যারিফমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকারের বিস্তারিত আলোচনা করেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের সর্বশেষ শ্রম পরিস্থিতি, রানা-প্লাজা পরবর্তী উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের সরকারী কর্মযজ্ঞ, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকারের গৃহীত ব্যাপক কার্যক্রম, সকল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশন, কর্মপরিবেশের মান উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।

তিনি বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এস.ই.জেড) গুলোতে প্রদত্ত চমকপ্রদ সুবিধাদি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর রেয়াতের উদার নীতিমালার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কানাডীয় ও মার্কিন উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানান।

মেলার তৃতীয় দিনে অনলাইন সোর্সিং, সোশাল কমপ্লায়েন্স, টার্কিশ ইকনমি এন্ড এ্যাপারেল, কনজুমার ও ব্রান্ড সাসটেইনেবিলিটি, নাফটা চুক্তির প্রভাব, গ্লোবাল এথিক্যাল মানুফ্যাকচারিং, ফ্যাশন এডুকেশন এবং মাল্টি চ্যানেল ও সেকেন্ডারি মার্কেট বিষয়ক আটটি পৃথক প্যানেল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এতে বক্তব্য রাখেন ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাব দেন।

রপ্তানিমুখি গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার শিল্পের বৃহৎ পরিসরের সোর্সিং মেলা কানাডায় এই প্রথম আয়োজিত হলো। চীন, বাংলাদেশ, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, তাইওয়ান, পেরু, জর্ডান, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, আমেরিকা ও কানাডার ১৮৫টি রপ্তানিমুখি শিল্পোদ্যোক্তা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ট্রেড ফ্যাসিলিটেটর এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞগণ এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি ও নতুন বাজার সম্প্রসারণের আশাবাদ নিয়ে শেষ হয় এ্যাপারেল টেক্সটাইল সোর্সিং কানাডা এক্সপো ২০১৬। বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী কোম্পানিসমূহের মধ্যে ছিলো এ্যন্থনী ইয়াং গার্মেন্টস লি., আর.এস. সুয়েটার্স লি., চরকা টেক্সটাইল লি. এবং হবিগঞ্জ টেক্সটাইল লি., মারমেইড সুয়েটার্স লি., স্যাটকো বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এ্যাপারেল লি., মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং মিলস লি., জাবন এ্যাপারেলস লি., রাজধানী এ্যাপারেলস লি., আই.এল. বাংলা লি., জ্যানটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ডাল নীটওয়্যার লি., আ.এস.টি. ফ্যাশনস লি. এবং মার্লিন নীটওয়্যার লি.। এই মেলা আগামী দু'বছরে বাংলাদেশের জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক রপ্তানি সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা।

মেলার শেষ দিনে প্রদর্শিত পোশাক সামগ্রীর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনুদান হিসেবে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা "ব্র্যান্ডস ফর কানাডা"র নির্বাহী পরিচালক হেলেন হ্যারাকাস এর নিকট হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, যা কানাডায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্যাপক ইতিবাচকতার সাথে আলোচিত হয়। উল্লেখ্য, আগামী বছরে একই সময়ে আবারো অনুষ্ঠিত হবে এ্যাপারেল টেক্সটাইল সোর্সিং কানাডা শীর্ষক এই গার্মেন্টস রপ্তানি মেলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত