সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে

১৭ আগস্ট, ২০১৭ ১১:১৮

অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ২০১৭ পালন করেছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের​হাই-কমিশনার মিজানুর রহমান দিবসের প্রথম ভাগে বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন। এ সময় দূতাবাসের কূটনীতিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। কানাডার রাজধানী অটোয়ার রিচলিউ ভ্যানিয়ার কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই-কমিশনার মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ এবং বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশনের সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত। অটোয়া, মন্ট্রিয়ল, টরন্টো, ক্যালগেরী, হ্যামিলটনসহ কানাডার বিভিন্ন শহরের বাংলাদেশী কমিউনিটি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাগণ, সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসীগণ এ আলোচনায় যোগদান করেন।

প্রথমেই ১৯৭৫-এর কালরাতের শাহাদাৎ বরণকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং তাঁদের পরিবারের সকল শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে হাই কমিশনের মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ, প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) মো. সাখাওয়াত হোসেন, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদুল হক, এবং প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) মো. আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (কন্সুলার) অপর্না রাণী পাল।

বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত তথ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র “বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর” প্রদর্শন করা হয় যা যা হলভর্তি উপস্থিত সকলকে আবেগাপ্লুত করে।

এরপর ​বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক আদর্শ, কর্ম, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান, স্বাধীন দেশ গঠন ও রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিনির্মাণে তাঁর সুমহান প্রশাসনিক নেতৃত্ব ও সাফল্য এবং বাঙালির মহান মুক্তিসংগ্রামে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ​ বিস্তারিত​আলোচনা করা হয়। বক্তব্য রাখেন ক্যালগেরী থেকে আগত প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ রফিক, মুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ প্রফেসর কবির হোসেন তরফদার, কানাডা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ – তোফাজ্জল আলী, মতিন মিয়া, ইতরাত জুবেরী সেলিম, গোলাম মুহিবুর রহমান, মুন্সী বশীর, আলী আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম বশীর উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা ফনীন্দ্র ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ওমর সেলিম শের, প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল গাফফার, মিসেস রাশেদা নেওয়াজ প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ১৫ আগস্ট ভয়াল রাতের ঘটনা নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের রচিত কবিতা “সেই রাতের কল্পকাহিনী”র আবেগঘন আবৃত্তি করেন দেওয়ান মাহমুদ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন রাজ্জাক হাওলাদার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কানাডা সফররত কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, “বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। এজন্য কাজ করে যাওয়া আপনাদের সকলের দায়িত্ব”। বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাক্রম তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। তাঁকে হত্যা করা মানে সারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে হত্যা করার শামিল। তাই এই হত্যাকারীদের কোন ক্ষমা নেই”। কানাডায় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবী জানান তিনি কানাডা সরকারের কাছে।

সভাপতির বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান​ বলেন, "বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচাইতে দুর্ভাগ্যের ও শোকাবহ দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই ভয়াল কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শিশুপুত্র রাসেল সহ পুরো পরিবারের প্রায় সব সদস্যদের হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে চেয়েছিলো। খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে তারা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির মুখে কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছিলো। দীর্ঘ ক্রান্তিকাল পেরিয়ে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার '৭৫-এর ঘাতকদের বিচার নিশ্চিত করেছে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তাই ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকে।"

তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে আগামী ২০১২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুদূরপ্রসারী কূটনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে যে নীতিমালার আলোকে দেশের পররাষ্ট্র নীতিকে ঢেলে সাজিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ হাই কমিশন সচেষ্ট রয়েছে। বাংলাদেশের হাই-কমিশনার বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে নিষ্ঠার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। হাই-কমিশনারের সহধর্মিণী মিসেস নিশাত রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি ঘাতক নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের সংকল্পের আলোকে মিশনের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং বলেন, এই ভয়াবহ খুনিদেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ হাই কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে তিনি সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি কানাডার জনপ্রতিনিধিদের উপর চাপ অব্যাহত রাখার লক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান। এরই মধ্যে বিভিন্ন শহর ও প্রদেশে “Movement for Repatriation of Killer Nur Chowdhury” শীর্ষক আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আবেদন জানিয়ে যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলছে তা বেগবান করার জন্য তিনি প্রবাসী কমিউনিটি সংগঠকবৃন্দকে অনুরোধ জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারবর্গ এবং ১৯৭৫ -এর ১৫ আগস্ট কালরাতে শাহাদাৎ বরণকারী সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতিহা পাঠ ও দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান সিরাজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত