ফুজেল আহমদ, কানাডা

২৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১১:৩৫

কানাডার টিকিট কাটার আগে যা করা জরুরি

স্বপ্নের দেশ কানাডা এখন অনেকের কাছেই বাস্তবের। একসময় কানাডার ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে যে পরিমাণ সম্ভব না ছিল; বর্তমানে সেটি সম্ভাবনাতেই রূপ নিয়েছে। আমাদের পরিচিত-অপরিচিত বাংলা কমিউনিটির বড় একটি অংশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানাডামুখী। কানাডায় আসার পর এখানকার স্বচ্ছ বাস্তবতা অনেকের সামনেই এক কঠিন-জটিল এবং অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি করে দিচ্ছে।

তারপরও যাদের প্রস্তুতি আছে; আছে মানসিক দৃঢ়তা এবং আর্থিক সচ্ছলতা কিংবা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত সংগতি রয়েছে; তারা নিঃসন্দেহে কানাডার অর্থনীতি এবং সমাজনীতিতে একসময় শুধু যুক্তই হবেন না অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির স্টিয়ারিংয়ে বসে হয়তো নেতৃত্বও দেবেন।

ইমিগ্র্যান্টদের দেশ কানাডাতে অরিজিন খোঁজা আটলান্টিকে ঝিনুক খোঁজা প্রায় সমার্থক। এখানে রেসিজম যা আছে সেগুলির চামড়ার। দক্ষিণ এশিয়ার মতো পদবির নয়; তবে সেখান হতে আসা কিছু সংখ্যক সেই ইর্ষাবেড়ায় আটকা আছে এখানেও। তাদের জন্য স্যরি বলুন। নিজেকে শক্ত রাখুন।

কানাডায় এই ভিসা প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই নিজে প্রসেস করছেন। আবার বড় একটি অংশ কোনো না কোনো এজেন্ট কিংবা কোন তৃতীয় মাধ্যমে তাদের ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন কিংবা করছেন। এই ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর যে বা যারা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন; তারা নিশ্চয়ই দেশের স্থাবর-অস্থাবর সকল কিছু গুছিয়ে স্থায়ীভাবে চলে আসার জন্য যে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন এজন্য ফ্লাই করার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

অনেকেই তাদের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল ডকুমেন্ট দিয়েছেন; সেটার সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। সেজন্য কানাডায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে কিংবা কখনো তৃতীয় কারো ইন্ধনে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কিংবা রেনডমলি ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন চালাচ্ছে। যা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও বটে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে অনেকেই ফেঁসে যাচ্ছেন অর্থাৎ তথ্যে গরমিলের কারণে কিংবা তথ্যগোপনের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভিসা ডিএক্টিভ করে দিচ্ছে।

এক্ষেত্রে এজেন্ট মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তরা তাদের চুক্তিবদ্ধ টাকা লেনদেন করে ফেললে পরবর্তীতে সেটি যেমন ফেরত পাচ্ছেন না; তেমনি কানাডা অভিমুখেও যাত্রা করতে পারছেন না। যা সব দিক দিয়ে এসব ভিসাপ্রাপ্তদের জন্য এক বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর্থিক এবং সামাজিকভাবে তারা এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনারা যারা নিজে অথবা এজেন্ট মাধ্যমে ভিসাপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা বিমানের টিকেট কনফার্ম করার পূর্বে; এমনকি যাত্রার প্রারম্ভে আপনাদের ভিসার ভ্যালিডিটি চেক করুন অথবা ভ্যালিডিটি চেক করে তবেই টিকেট কাটুন। টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর সাথে ফ্লাইং পর্যন্ত চুক্তি করুন।

ইতিমধ্যে চারপাশে চেনাজানা অনেকেরই ভিসা ডিএক্টিভের সংবাদ অনেকেই শুনেছেন; আমিও শুনেছি। এবার পরিচিত একজনের কাছে আসা ইমেইল পেয়ে তাহার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার কারণে এই সতর্কতামূলক লেখাটির উদ্দেশ্য হলো হয়তো কারো উপকারে আসতে পারে।

ভিসা ইনভ্যালিড হওয়ার সম্ভাব্য প্রধান কারণ হলো আবেদনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ভুল তথ্য প্রদান করা হয়েছে যা পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ কিংবা ভিসা অফিসারের কাছে ধরা পড়েছে। যার কারণে ভিসা ডিএক্টিভ করা হয়েছে। বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানোর কারণ হচ্ছে ইমিগ্রেশনে আপনার ভিসা যাচাই করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার সেটি ডিএক্টিভ কিংবা ইনভ্যালিড দেখতে পাচ্ছেন। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে অনলাইন টিকেট খুঁজে না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত সপ্তাহে ঢাকা হতে ফ্লাই করে ট্রানজিট পয়েন্ট হংকং থেকে ফেরত এসেছেন আমাদের পরিচিত দুইজন।

ভিসা ডিএক্টিভ বা ইনভ্যালিড করার সাথে সাথে আইআরসিসি থেকে আপনার আবদেনকৃত মাধ্যমে ইমেইলে জানানো হয়; কিন্তু আপনি মেসেজ/ইমেইল চেক করেননি বা যিনি আপনার ফাইল প্রসেস করেছেন তিনি আপনাকে সেটা জেনেও জানাননি।

আর্থিক ক্ষতি এড়াতে টিকিট কনফার্ম করার পূর্বে এবং বিমানবন্দরে যাওয়ার পূর্বে আপনার ভিসার ভ্যালিডিটি চেক করুন। এটা চেক করা খুবই সহজ। আপনার জিসি কি একাউন্টে ঢুকলেই ভিসা স্ট্যাটাস ভ্যালিড/ ডিএক্টিভ অথবা ইনভ্যালিড লেখা থাকবে। এছাড়া ইমেইলে মেসেজ আসবে জিসি কি চেক করার জন্য।

আইআরসিসি যদি মনে করে আপনি তাদেরকে কোন ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা পেয়েছেন এবং ভিসা ইস্যু করার সময় সেটা ধরা পড়েনি পরবর্তীতে সেটা ধরা পড়েছে; তখন তারা আপনার ভিসা বাতিল/ ডিএক্টিভ /পেন্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এক্ষেত্রে ভিসা বাতিল/পেন্ডিং করার জন্য আপনার পাসপোর্ট তাহারা যেহেতু পাচ্ছে না সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় ইমেইল করে জানিয়ে দিচ্ছে!। কারণ আপনাকে বললেও আপনি নিশ্চয় ভিসা বাতিল করার জন্য পাসপোর্ট আবারো তাদের কাছে জমা দেবেন না।

তাই কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনের সাথে অটো জেনারেটেড ইউসিআই নাম্বার বা ভিসা নাম্বার ব্লক করে দেয় অনলাইন সিস্টেমে। এই ব্লক করার নাম হচ্ছে ভিসা ইনভ্যালিড/ ডিএক্টিভ /পেন্ডিং কিংবা বাতিল।

বিশ্বের যে কোন দেশেই আপনার যাত্রা শুভ হউক। ট্রাভেলিং এর ক্ষেত্রে নানাবিধ ও সমস্যা আসতেই পারে তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কানাডা ভিজিটের ক্ষেত্রে আপনার সর্তক পদক্ষেপ আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে। সবার প্রবাসজীবন হউক আনন্দময় এই শুভকামনা সবসময়ই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত