সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:২১

সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিনে অনলাইনে ‘সঞ্জীব উৎসব’

আজ ২৫ ডিসেম্বর। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের ‘সঞ্জীব চত্বরে’ সঞ্জীব উৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজন করে আসছে ‘সঞ্জীব উৎসব’, তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসব। দেখা যাবে ‘সঞ্জীব উৎসব’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে। নবমবারের মতো আয়োজিত এ উৎসবে অংশ নেবেন সঞ্জীব অনুরাগী কিছু সংগীতশিল্পী, লেখক ও সাংবাদিক।

এবার উৎসবে গান ও স্মৃতিচারণা করবেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, আবিদা নাসরিন কলি, বাপ্পা মজুমদার, শেখ রানা, শুভ, পারভেজ, এলিটা করিম, জয় শাহরিয়ার, সিনা হাসান, সাহস মোস্তাফিজ ও মন, লালন মাহমুদ, ফারাবি, সুহৃদ স্বাগত, তুহিন, উদয় ও গানকবি।

এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি ও আজব কারখানা। অনলাইনে আয়োজিত হলেও রাত সোয়া ৮টায় টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে। উৎসব শুরু হবে রাত ৮টায়, চলবে ১০টা পর্যন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন সৃষ্টিশীল শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিক।

সঞ্জীব চৌধুরী ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর ঢাকার বকশী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন।

১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও মেধা তালিকায় স্থান করে নেন তিনি। তার বাবা ননী গোপাল চৌধুরী এবং মা প্রভাষিণী দেবী।

সঞ্জীব চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় তার লেখা প্রতিবাদী কবিতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবেও তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

শিল্পী ও গীতিকবি হিসেবে তরুণ প্রজন্মের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাংবাদিকতায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। মূলত তার হাত ধরেই দৈনিক পত্রিকায় ফিচার বিভাগ নিয়মিতভাবে চালু হয়। জীবদ্দশায় দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজকের কাগজ ও দৈনিক যায়যায়দিনে কর্মরত ছিলেন।

১৯৯০ সালে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে মিলে সঞ্জীব চৌধুরী গঠন করেন ব্যান্ড দলছুট। ১৯৯৬ সালে এ ব্যান্ড তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘আহ’ প্রকাশ করে বেশ প্রশংসিত হয়। এরপর তাদের ‘হৃদয়পুর’, ‘আকাশচুরি, এবং জোছনাবিহার’ অ্যালবাম থেকে একাধিক গান জনপ্রিয়তা পায়।

সঞ্জীব চৌধুরীর ক্যারিয়ারের একমাত্র একক অ্যালবাম ছিল ‘স্বপ্নবাজী। এসব অ্যালবামে সঞ্জীব-বাপ্পার গাওয়া ‘গাড়ি চলে না’, ‘বায়স্কোপ’ এবং সঞ্জীবের কণ্ঠে ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘চোখটা এত পোড়ায় কেন’-সহ একাধিক গান শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।

২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ অবস্থায় এপোলো হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এ গুণী ব্যক্তিত্ব। তার সৃষ্ট অজস্র গান এখনও নবীনদের অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন এ প্রজন্মের অনেক সংগীতশিল্পী।

ধারাবাহিকসহ বেশ কয়েকটি নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। লিখেছেন অনেক গল্প ও কবিতা। তার সুর ও গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে ‘বায়োস্কোপ’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘আমি তোমাকে বলে দিব’, ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস’, ‘চোখ’, ‘তখন ছিল ভীষণ অন্ধকার’, ‘আহ ইয়াসমিন’, ‘রিকশা’, ‘কথা বলব না’।

তার গাওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের লেখা ‘গাড়ি চলে না’ এবং ‘কোন মেস্তরি বানাইয়াছে নাও’ গান দুটিও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত