নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ২১:৩৬

উৎসবের নাম পলো বাওয়া

তখনো সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশা পড়ছেও খুব। তারউপর কদিন ধরেই হাড়কাঁপানো শীত। তবু সকালেই বিশ্বনাথের গোয়াহরি বিলে (দক্ষিণের বড় বিল) হাজির শত শত মানুষ। সবার হাতেই পলো।

পৌষ সংক্রান্তির সকালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের এই বিলে শুরু হয় বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব। যা চলবে পুরো এক সপ্তাহব্যাপী।

 গোয়াহারি বিলে পলো বাওয়া বিশ্বনাথ উপজেলার এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিতে এলাকার অনেক প্রবাসী দেশে আসেন।  স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন এলাকার মেয়েরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

সোমবার পলো বাওয়া উৎসব শুরুর পূর্ব থেকেই গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সকাকে পলো নিয়ে গোয়াহরি গ্রামের বিলে মাছ শিকারে নামেন নানা বয়সী মানুষ।

জানা যায়, উৎসবচলাকালীন ১৫ দিন  গোয়াহরি বিলে মাছ ধরতে পারবেন যে কেউ। গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই পনের দিন বিলে মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

পলো বাওয়ায় অংশ নেওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী কায়সার আহমদ বলেন, বিলের পানি কমে যাওয়াতে এবার মাছ শিকার হয়েছে অনেক কম। তবে মাছ শিকার নয় সবাই মিলে মাছ ধরতে নামাই আনন্দের। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে সবার সাথে সবার দেখা হয়।

পলো নিয়ে ঝপ-ঝপা-ঝপ শব্দের তালে তালে প্রায় ২ঘন্টা চলে বার্ষিক ওই উৎসব। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো পলো বাইতে পারেননি অনেকেই।
সৌখিন মাছ শিকারী সাহিদুর রহমান বলেন, গত বছর ১৫টি মাছ শিকার করে ছিলাম। কিন্তু এবার মাত্র ১টি মাছ শিকার করেছি। এবার একটি বড় কাতলা শিকার করেছি।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলম খান বলেন, ছোট বেলা ৩টা মাছ শিকার করে ছিলাম। তা নিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়ে ছিল। দীর্ঘদিন পর আজ আবার পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কয়েকশ লোক। মাছ ধরার  দৃশ্য উপভোগ করতে বিলের পাড়ে জড়ো হয়েছেন হাজারও মানুষ। তাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরাও রয়েছেন।

মাছ শিকার দেখতে আসা বৃদ্ধা আফিয়া বেগম বলেন, এখন আর আগের দিন নাই। আগে বিলে হাত দিয়েও মাছ ধরা যেতো  বিলে পানি কম থাকায় এখব মাছ কমে গেছে। তবে সবাই মিলে আনন্দ করছে এটাই মজার।

৫ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসী গোলাম কামরান বলেন, দীর্ঘদিন পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহন করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তাই এবারে দেশে এসে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ পেতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর মাছ শিকার করতে পেরে এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত