আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৭ অক্টোবর, ২০২০ ২১:৪৭

বাংলাদেশসহ ৪ মুসলিম দেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি ফ্রান্সের

বাংলাদেশসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে ফ্রান্স। দেশটি বলছে, ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে যারা এসব দেশে অবস্থান করছেন কিংবা ভ্রমণ করতে চান, তাদের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই ভ্রমণ সতর্কতা প্রকাশ করা হয়েছে।

মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর কার্টুন প্রদর্শনের পক্ষে প্যারিসের কট্টর অবস্থান ঘিরে মুসলিম দেশগুলোতে ফ্রান্সবিরোধী বিভিন্ন ধরনের বিক্ষোভ ও কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সতর্কতা জারি করেছে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তায় যেসব দেশে অবস্থান বা ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে— ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়া।

এর বাইরে তুরস্কে ফরাসি দূতাবাস থেকেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ফ্রান্স ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সমালোচনামূলক অবস্থান এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভ্রমণ সতর্কবার্তায় ফ্রান্স বলছে, মুসলিম দেশগুলোতে ওই কার্টুন সম্পর্কিত যেকোনো ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি থাকলে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। পর্যটক বা বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনা বেশি— এমন জায়গাগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

মহানবী (সা.)-এর কার্টুন প্রদর্শনকে মুসলিমরা অবমাননা হিসাবেই দেখে। তবে গত ১৭ অক্টোবর ফরাসি ইতিহাস শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি ক্লাসে শার্লি হেবদো’তে প্রকাশিত এমন একটি কার্টুন দেখানোর পরই স্কুলের বাইরে চেচেন বংশোদ্ভূত এক তরুণের হাতে খুন হন। এ ঘটনায় দেশটিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

ওই সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ মৌলবাদী ইসলামের বিপরীতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা নিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে কথা বলেছিলেন। তিনি ওই শিক্ষককে ‘বীর’ আখ্যা দিয়ে উগ্র ইসলামপন্থিদের দেশের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেন। পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওই কার্টুন প্রদর্শনও করা হয় ফ্রান্সে।

এ ঘটনাকে ঘিরেই মুসলিম দেশগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দেশগুলোতে ফ্রান্সবিরোধী নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ফ্রান্সের কট্টর অবস্থানের জের ধরে এরই মধ্যে কাতার ও কুয়েতের সুপারমার্কেটগুলোতে ফরাসি পণ্য বয়কট শুরু হয়েছে। জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই একই পথে হাঁটার চিন্তাভাবনা করছে। তবে এরই মধ্যে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেন ফরাসি পণ্য বর্জন না করে। বাংলাদেশেও ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলো ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বেশকিছু কর্মসূচি পালন করেছে।

মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও ফ্রান্স ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইট করেছেন, মহানবী (সা.)-এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে উৎসাহিত করে ম্যাখোঁ ইসলাম ধর্মকেই আক্রমণ করছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ম্যাখোঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি তুর্কিদের প্রতি ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত