সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:২৪

ধর্মীয় চরমপন্থা ঠেকাতে ফ্রান্সে নতুন আইন

ফ্রান্সে সম্প্রতি চরমপন্থিদের বেশ কয়েকটি হামলার পর ইসলামি চরমপন্থাকে ঠেকাতে নতুন একটি বিল পাস করেছে ফরাসি মন্ত্রিসভা। ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষায় দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোর প্রচেষ্টার পর আসা খসড়া এই আইনটিতে হোম-স্কুলিংয়ের নিয়ম কানুন এবং হেইট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য রুখতে কঠোরতা আরোপ করবে।

ফ্রান্সে এবং এর বাইরে অনেক সমালোচক তার সরকারকে দুষছেন যে ধর্মকে টার্গেট করতেই এই আইন ব্যবহার করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসতেক্স এটিকে "সুরক্ষা আইন" বলে অভিহিত করেছেন যা মুসলিমদেরকে উগ্রতার হাত থেকে মুক্তি দেবে বলে মনে করেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এটি "ধর্মের বিরুদ্ধে বা বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মের বিরুদ্ধে" ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি। খবর বিবিসি বাংলার।

"প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির সমর্থনে" এই আইনটি অনলাইনে হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ঠেকাতে বিধি-নিষেধ আরোপ করবে এবং খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার জন্য অন্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে।

গত অক্টোবরে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরশ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই আইনকে দেখা হচ্ছে। ইসলামের নবীর কার্টুন শিক্ষার্থীদের দেখানোর কারণে এক হামলাকারীর হাতে নিহত হয়েছিলেন ৪৭ বছর বয়সী প্যাটি। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তার বিরুদ্ধে একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা চলছিল।

এই আইনের অধীনে গোপনে চলা যেসব স্কুল ইসলামি আদর্শ প্রচার করে সেগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং হোম-স্কুলিং বা বাড়িতে শিক্ষার বিষয়টি উপর কড়াকড়ি আরোপ হবে।

আইনটি বহুবিবাহের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেবে। এর আওতায় একাধিক স্ত্রী রয়েছে এমন আবেদনকারীকে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে না। যেসব চিকিৎসক মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করবেন তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা বা জরিমানা হতে পারে।

মুসলিম সংস্থাগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে নতুন নিয়ম আসবে এবং তহবিল পেতে হলে তাদেরকে ফ্রান্সের "প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে" সমর্থন করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরিধানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটির আওতা বাড়ানো হবে। এই নিষেধাজ্ঞা এখন থেকে যানবাহন কর্মী, সুইমিং পুল এবং মার্কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

খসড়া আইনটি এতদিন বিবেচনাধীন ছিল। কিন্তু কথিত ইসলামপন্থীদের সাম্প্রতিক হামলা এটিকে আবারো এটিকে এজেন্ডা হিসেবে উত্থাপিত হওয়ার পেছনে কাজ করেছে। ফ্রান্সে যে তিনটি হামলা অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে প্যাটির হত্যাকাণ্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। অক্টোবরে নিসে একটি চার্চে ছুরি হামলায় তিন জন নিহত হয়। প্যারিসে শার্লি এবদো ম্যাগাজিনের দপ্তরের কাছে সেপ্টেম্বরে ছুরি হামলায় দুই জন গুরুতরভাবে আহত হয়। ২০১৫ সালে এই ম্যাগাজিনের কার্যালয়েই একটি প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা।

সেক্যুলারিজমসহ ফরাসি "প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে"র একজন কট্টর সমর্থক প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তিনি ইসলামকে "সংকটে থাকা" ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং শার্লি এবদোর ইসলামের নবীর কার্টুন প্রকাশের অধিকারের প্রতি সমর্থন করেন তিনি।

ফ্রান্সে প্রায় ৫০ লাখ মুসলিম জনগণের বসবাস, যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত