সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৫৬

মেয়াদ শেষ হতে দু’সপ্তাহ বাকি, তবুও ট্রাম্পকে পদ থেকে সরানোর ডাক!

মেয়াদ শেষ হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাকি আরও প্রায় দু’সপ্তাহ। কিন্তু ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর ডেমোক্র্যাটরা এখন সময় শেষের আগেই তার ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছেন। ক্যাপিটলে হামলা ট্রাম্পই উস্কে দিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।

মার্কিন হাউজের বিচারবিভাগীয় কমিটির বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাটই বুধবার সন্ধ্যায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

বিবিসি জানায়, এ চিঠিতেই তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘ক্যাপিটলে হামলা উস্কে দিয়ে গণতন্ত্রকে অবমাননা করার চেষ্টা’র অভিযোগ করে বলেছেন, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।

২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী, কোনও প্রেসিডেন্ট শারিরীক বা মানসিকভাবে অসুস্থতার কারণে ‘দায়িত্ব পালনে অক্ষম’ হলে মেয়াদ শেষের আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া যায় এবং ক্ষমতা সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে ভাইস-প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ চালাতে পারেন।

তাছাড়াও, এই সংশোধনীর চার নং ধারায় বলা আছে, কোনও প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অপারগ হিসাবে গণ্য করে বিষয়টি কংগ্রেসকে জানাতে চিঠি দিতে পারেন।

এরপর নিয়মানুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট সাময়িকভাবে দায়িত্ব নিতে পারেন।তবে তার জন্য কংগ্রেসে ভোটাভুটিও করতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে প্রতিটি চেম্বারেই প্রয়োজন পড়বে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের।

বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলার সময় ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোও বলছে ট্রাম্পের উস্কানিতেই হামলা হয়েছে।

নির্বাচনের আগে-পরে তার অসংযত আচরণ, ভোটের ফল পক্ষে না এলে তা মেনে না নেওয়ার কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন ট্রাম্প। সেকথা অক্ষরে অক্ষেরে পালনও করেছেন তিনি। এমনকী সর্বশেষ জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনে দুই রিপাবলিকান প্রার্থী হেরে যাওয়ার পরও তা তিনি মানতে চাননি। আর এরপর ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনা করেছে।

হাউজের বিচারবিভাগীয় কমিটির সব ডেমোক্র্যাটদের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে মানসিকভাবে অসুস্থ তাই তিনি দেখিয়ে দিলেন। আর এখনও তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অক্ষম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার এও দেখিয়ে দিয়েছেন যে তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক।

মার্কিন সেনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার অবিলম্বে ট্রাম্পকে সরানোর ডাক দিয়ে বলেছেন, তার আর একদিনও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। কেবল ডেমোক্র্যাটরাই নয়,গণমাধ্যমগুলোও অবিলম্বে ট্রাম্পের অপসারণ চাইছে।

‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ট্রাম্পকে সরানোর ডাক দিয়ে বলা হয়েছে, তার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার প্রতিটা মুহূর্ত আইন-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আরও কয়েকটি সংবাদপত্রেও ধ্বনিত হয়েছে একই সুর।

ট্রাম্পেরই মন্ত্রিসভায়ও আলোচনা

খোদ ট্রাম্পের মন্ত্রিসভাই তাকে সরাতে ২৫তম সংশোধনী নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সিবিএস নিউজ এবং সিএনএন এর প্রতিবেদনেও। সিএনএন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

সিবিএস নিউজ জানায়, মাইক পেন্সের কাছে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, মন্ত্রিসভাতেও ট্রাম্পকে সরানোর পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন আছে কিনা তাও এখনও পরিষ্কার নয়।

আরও একটি বিষয় হচ্ছে, ২৫ তম সংশোধনীর চতুর্থ ধারা ১৯৬৭ সালে এই সংশোধনী গৃহীত হওয়ার সময় থেকে আজ পর্যন্ত কখনও ব্যবহার করা হয়নি। তারপরও এ পদ্ধতিতেই ট্রাম্পকে সরানোর ডাক ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। কিছু রিপাবলিকানও এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিচ্ছেন।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত