সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০১ এপ্রিল, ২০১৬ ২০:১৬

উদ্ধারকাজে তারাই নায়ক

তারা কেউ উদ্ধারকর্মী নন, নন কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। শহরের বুকে বেড়ানো তারা যেকোনো একজন।
তবু এরাই হয়ে আবির্ভূত হলেন সবচেয়ে বড় উদ্ধারকর্মী হিসেবে। কলকাতার জোড়াসাঁকোতে ফ্লাইওভার ধসে সেচ্ছা উদ্ধারকর্মী হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন কিষণ গুপ্ত, পরিমক কাঞ্জিলাল, অজয় মল্লিক ও আকাশ পাণ্ডে, দেবাশীষ বিশ্বাস। সাহস আর পরিশ্রমের কারণে স্থানীয় জনতার চোখে আজ তারা নায়ক।  

কলকাতা শহরের পোস্তার এলাকা বাসিন্দা কিষণ গুপ্ত।  বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটায় বাড়িতেই ছিলেন। আচমকা কানফাটা শব্দে বাড়িটা কেঁপে উঠলে জানলায় উঁকি দিয়ে দেখেন, সামনে নতুন ফ্লাইওভারটা ধসে গেছে। চারদিকে ধুলো, ছুটোছুটি। এক মুহূর্তও ভাবেননি। দৌড়ে এসে নেমে পড়েছেন উদ্ধার কাজে। চোখের সামনে কাউকে কাউকে মরে যেতে দেখেছেন। আবার কাউকে যন্ত্রণায় ছটফট করতেও। চাপা পড়া একটি অটোচালকের পাশেই পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত দু’জন। টেনে বের করেন তাঁদের। আরেকটি লাক্সারি ট্যাক্সি  থেকে উদ্ধার করেন এক জনকে। এভাবে বিরাবহীন পরিশ্রমে অনেক লোক বের করে আনেন তিনি।


কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ক্যাশিয়ারে চাকরি করেন পরিমল কাঞ্জিলাল। বাড়ি বাগদায়। অতীতে কখনও পাড়ার লোক বা আত্মীয়দের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। এ দিন নিজের বিভাগে কাজ করতে করতেই খবর পান দুর্ঘটনার। আর বসে থাকতে পারেননি। ইমার্জেন্সিতে এসে হাতে গ্লাভস পরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সঙ্গে স্ট্রেচার আর ট্রলিতে আহত আর মৃতদের বয়ে নিয়ে গিয়েছেন সারা দিন। বললেন, ‘‘মানুষগুলো যেন মশার মতো থেঁতলে গিয়েছে। স্ট্রেচারে নিয়ে যেতে যেতে কয়েক জন দেখলাম নিঃশ্বাস নেওয়া থামিয়ে দিল। আফশোসটা সেখানেই রইল। ওঁদের বাঁচানো গেল না।’’

মেডিক্যালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অজয় মল্লিক। দুপুর থেকে আহতদের অ্যাম্বুল্যান্স থেকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কখনও ট্রলি নিয়ে ছুটছেন, কখনও বা ভিড় সামলাতে লোকজনকে ধমকও দিচ্ছেন। রক্তমাখা গ্লাভস খোলার ফুরসত পাননি। বললেন, ‘‘শুধু মনে হচ্ছে, চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য যেন কারও জীবন না যায়। তাই এত ছোটাছুটি করছি।’’

গণেশ টকিজের কাছেই একটি দোকানে খেতে এসেছিলেন আকাশ পাণ্ডে। হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখেন ফ্লাইওভার ভেঙে  পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে প্রচণ্ড ধোঁয়া। যে যার মতো দৌড়চ্ছে। ধোঁয়া কাটতেই চোখে পড়লো বড় বড় সব স্লেভের নিচে  দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাচালকেরা আটকে পড়েছেন। তখনও ঘটনাস্থলে আসেনি পুলিশ কিংবা ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা। এ দিকে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছে বেশ কিছু গাড়ি। চারদিকে চিৎকার আর রক্ত। আশপাশের কিছু রিক্সাচালকদের সঙ্গে উদ্ধারের কাজে হাত লাগান আকাশ। গাড়িতে আটকে থাকা কয়েকজনকেও বের করে আনেন।

ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দু’মিনিটের দূরত্বে ছিলেন দেবাশিস বিশ্বাস। উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে শুনেই দৌড়ে সেখানে যান। বললেন, ‘‘আমার এক বন্ধুও ওখানে ছিল। দু’জন একসঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করি। চাপা পড়া অটোর দু’জন যাত্রী এবং এক পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করি। কিন্তু তার পরেই দুর্ঘটনাস্থলে আগুন লেগে যায়। বাধ্য হই সরে যেতে।’’


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত