সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ জুন, ২০১৬ ১৯:৫০

আলীর শেষকৃত্যে বক্তাদের তালিকা থেকে বাদ পড়ে ফিরে গেলেন এরদোয়ান

কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েও পুরো আনুষ্ঠানিকতা শেষ না করেই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন  ক্ষুব্ধ ও অপমানিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, শুক্রবার আলীর শেষকৃত্যে এরদোয়ানের বক্তব্য রাখার কথা চূড়ান্ত হয়েছিল আগেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এরদোয়ান এবং জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর নাম।

মোহাম্মদ আলীর জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে অনুষ্ঠিত শেষকৃত্যে বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করে সেদিনই তুরস্কে ফিরে আসেন। তুরস্কে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও সফর সংক্ষিপ্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  

আলীর শেষকৃত্যে বক্তব্য রাখার তালিকায় বিখ্যাত সব নামের মধ্যে ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, কৌতুকাভিনেতা বিলি ক্রিস্টালসহ আরও অনেকে। সেখানে বিদেশি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহর নাম। কিন্তু সোমবার আলী পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল জানিয়েছেন, আরও দুজন অঘোষিত ব্যক্তি বক্তব্য রাখবেন ওই অনুষ্ঠানে। ফলে তালিকা থেকে দুই বিদেশি অতিথির নাম বাদ দেওয়া হয়। গানেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করি ওই দুই বিশ্বনেতা বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’

ধারণা করা হচ্ছে, এরদোয়ান চেয়েছিলেন আলীর মরদেহে মক্কার কাবা থেকে নিয়ে আসা একখণ্ড কাপড় ছড়িয়ে দিতে, কিন্তু অনুষ্ঠানের আয়োজকরা তাতে রাজি হননি। তিনি তুরস্ক থেকে এক আলেমকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরদোয়ান চেয়েছিলেন ওই আলেম শেষকৃত্যে কোরান পাঠ করবেন। কিন্তু এরদোয়ানের সেই অনুরোধও রক্ষা করা হয়নি।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইসলামি আলেম ফেতুল্লাহ গুলেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যিনি এরদোয়ানের কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত।  

তুর্কি সংবাদমাধ্যম হুরিয়ত ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের সময় তুর্কি প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীদের সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ধস্তাধস্তি হয়েছিল। আর এ বিষয়টিকে এরদোয়ান ভালোভাবে নেননি।

তবে কারণ যাই হোক না কেন, এরদোয়ানের আচমকা সফর সংক্ষিপ্ত করাটা বেশ অবাক করেছে। আলীর মৃত্যুর পর গত শনিবার বেশ টুইটারে বেশ কিছু পোস্ট করেন এরদোয়ান। মুসলিম বিশ্বের মতো তুরস্কেও আলী বেশ জনপ্রিয়। শুধু মুসলিম বলে নয়,  উপনিবেশবিরোধী ও বর্ণবাদবিরোধী মানসিকতার জন্য তুরস্কে আলীকে আইকন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আলী ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি লুইসভিলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে লুইসভিলের যে জায়গায় আলী লড়াই করেছিলেন, সে জায়গাতেই শুক্রবার তার স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মোহাম্মদ আলীর জানাজায় অংশ নেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। জানাজা পরিচালনা করেন ঈমাম জাইদ শাকির।

১৯৬৪ সালে আলী ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। এরপরই ক্যাসিয়াস ক্লে নামটি পরিবর্তন করে হয়ে ওঠেন মোহাম্মদ আলী। শুরুতে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন নেশন অব ইসলাম-এ যোগ দেন এবং পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে একজন বক্সার ও বক্তা হিসেবে বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

৩ জুন ২০১৬ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সের একটি হাসপাতালে ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত