অনলাইন ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৬ ১৭:৫১

ধর্ষিতা মেয়েটিকে জরিমানার পর ৩ মাসের কারাদণ্ড

তরুণীটি নেদারল্যান্ডসের। বন্ধুর সাথে জীবনের প্রথম ‘স্বাধীন ভ্রমণে’ গিয়েছিলেন কাতার। সেখানে গিয়ে মুখোমুখি হলেন ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার। ধর্ষিতা হলেন এবং এরপর অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো ‘বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের’ দায়ে ৮৪৫ ইউএস ডলার জরিমানাই শুধু নয়; তিনমাসের কারাবাসও করতে হলো তাকে।

অবশেষে এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেষে দেশে ফেরার অনুমতি পেয়েছে লরা নামের ওই তরুণী।

দেশটির অ্যালকোহল পানের অনুমোদিত সামান্য কয়েকটি স্থানের একটি ডব্লিউ দোহা হোটেলের দ্য ক্রিস্টাল লঞ্জ নাইটক্লাবে নারকীয় অভিজ্ঞতা হয় তার। সেখানে পান করে নাচের সময় তিনি অসুস্থ অনুভব করেন এবং অচেতন হয়ে পড়েন বলে জানান তার এ্যাটর্নি। তবে জ্ঞান ফেরার পর অপরিচিত এক ব্যক্তির অ্যাপার্টমেন্টে নিজেকে আবিষ্কার করেন এবং বুঝতে পারেন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি।

লরার অ্যাটর্নি টেলিগ্রাফকে বলেন, তিনি বুঝতে পারেন গোপনে তার পানীয়তে কিছু মিশিয়ে তাকে নেশাগ্রস্ত করে ধর্ষণ করা হয়েছে।

এর বিরুদ্ধে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে অভিযোগ দায়ের করতে কাতারের পুলিশের কাছে গেলে তাৎক্ষণিকভাবেই ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত সিরিয়ান নাগরিক ওমর আব্দুল্লাহ আল-হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং লরাকেও একইসাথে আটক করা হয়।

ডাচ এ্যাটর্নি লোকোলো বলেন, আক্রান্ত লরাকে তখনই অভিযুক্ত করা হয় এবং ভীতসন্ত্রস্ত লরার কাছে আরবি ভাষায় লেখা দুর্বোধ্য এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেয়া হয়।  

এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়, ব্যভিচারের দায়ে গত তিন মাস দোহা কারাগারে আটক ছিলেন লরা। দেশটিতে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক অবৈধ।

প্রায় তিনমাসের মতো গোপনীয়তা এবং নীরবতার পর তরুণীটির আসন্ন মুক্তি আলোড়ন তুলেছে। ডাচ দূতাবাসের হেফাজতে লরাকে সোমবার মুক্তি দেয়া হয় বলে জানায় এপি। ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্ট কোয়েনডার্স তার মুক্তিতে আনন্দ প্রকাশ করে একটি টুইটও করে বলেন, ‘আমি খুশী যে লরা শিগগিরই বাড়ি ফিরতে পারবে।’

সোমবার কাতারের একটি আদালতে লরাকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের স্থগিত কারাদণ্ড প্রদান করা হয় এবং এই সপ্তাহের শেষ দিকে তাকে নেদারল্যান্ডসে ফেরত পাঠানো হতে পারে। শুনানি শেষে কাতারে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত ইয়েভেট ভ্যান সৌদ আল জাজিরাকে এমনটি জানান।

কাতারের আদালতের এক কর্মকর্তা বলেন, এই শাস্তিটা আরও কঠোর হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো। দণ্ডটিকে ‘সামান্য’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, লরা মুসলিম হলে অত্যন্ত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেতে হতো তাকে। কাতারে এই ধরণের অভিযোগে থেকে কেউ বেরিয়ে যেতে পারে না।

অভিযুক্ত হাসানকেও দোষি সাব্যস্ত করা হয়, তবে ধর্ষণের দায়ে নয়। ব্যভিচার এবং প্রকাশ্যে মাতলামির জন্য ১৪০ বার চাবুকের মার ভোগ করার শাস্তি দেয়া হয় তাকে। তবে হাসান দাবি করেন পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। সে জন্য অর্থ দাবি করে না পেয়েই সে পুলিশের কাছে যায় লরা। তার ঘড়ি ও সেল ফোন চুরিরও চেষ্টা করেছিল মেয়েটি।   

যৌন সহিংসতার শিকার তরুণীটির মুক্তির জন্য কাতার প্রশাসনকে চাপ দিতে তার মা এবং এ্যাটর্নি তার প্রথম নাম লরা ও ছবি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালান।

দেহব্যবসার কথা লরার বন্ধু গার্ডিয়ানের কাছে স্বীকার করলে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আটকাবস্থায় লরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে তার মা ম্যারিয়নের দাবিকে ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরেকটি ‘জটিল বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

কাতারের এমন আচরণ এবং অ্যালকোহল পানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান দেশটির ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজনের উপযুক্ততা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের আহবান জানিয়েছেন কয়েকজন সমালোচক। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলে ১০ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছিল।

ধর্ষণের শিকার হয়েও শাস্তি পাওয়ার এই অদ্ভুত দৃষ্টান্ত কিন্তু এই অঞ্চলে একেবারেই বিরল নয়। এর আগেও ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক হোটেলে গণ-ধর্ষণের শিকার এক  অস্ট্রেলিয়ান নারী অভিযোগ করতে গিয়ে আটমাসের কারাদণ্ড পান।

আর তিনবছর আগে দুবাইতে ধর্ষণের মামলা করা এক নরওয়েজিয়ান এক নারীকে ব্যভিচারে অভিযুক্ত করে ১৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এসব উদাহরণের মধ্যে লরা ‘ক্ষমা’ লাভের পাশাপাশি কাতার ছাড়ার অনুমতি পেয়েছে সেটাই বা কম কিসের!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত