সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৭ জুন, ২০১৬ ১৩:০৪

‘পার্টিতে যাও, প্রযোজক-পরিচালকদের সঙ্গে মেলামেশা কর’

সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ফেসবুকে স্মৃতি ইরানি তুলে ধরেছেন তার জীবন সংগ্রামের গল্প

ডিয়ার (প্রিয়) বলায় চটেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ও সাবেক অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি।

গত মঙ্গলবার বিহারের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরী টুইটারে স্মৃতি ইরানিকে 'ডিয়ার স্মৃতিজি' বলে সম্বোধন করে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে একটি প্রশ্ন করেন।

স্মৃতিও পাল্টা টুইটে প্রশ্ন করেন, কেন অশোক একজন মহিলাকে 'ডিয়ার' লিখেছেন।

এরপর টুইটারে বেজায় রোষের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সমালোচনা এবং ব্যঙ্গ শুরু হয়ে যায়।

অনেকেই লিখেছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকার কারণেই মন্ত্রী জানেন না যে, 'ডিয়ার' সম্বোধনে 'অশালীন' কিছু নেই।



সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ফেসবুকে স্মৃতি ইরানি তুলে ধরেছেন তার জীবন সংগ্রাম। সেখানে এক প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'যখন অভিনয় জগতে নিজের জায়গা তৈরির জন্য লড়াই করছি, তখন শুনতে হয়েছে, পার্টিতে যাও, প্রযোজক-পরিচালকদের সঙ্গে মেলামেশা কর। কাজ পেতে হলে এগুলো দরকার!'

ফেসবুকে অভিমানী মন্ত্রী জানান, চুপ করে তিনি থাকবেন না। কেউ নিন্দা করলে তার সাফ প্রতিবাদ করবেন।

টম ক্রুজ অভিনীত হলিউডের ছবি 'জেরি ম্যাগউআয়ারে'র জেরির সঙ্গে তুলনা করে স্মৃতি লিখেছেন, বিহারের শিক্ষামন্ত্রী নিজে যেখানে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, সেখানে মন্ত্রীর সমর্থকেরা কেন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন! কেন পদে পদে বুঝিয়ে দেয়া হবে যে, তিনি মহিলা। আর তাই সব অপমান তাকে মুখ বুজে সহ্য করতে হবে!

প্রসঙ্গত, 'জেরি ম্যাগউআয়ার' ছবিতে টম ওরফে জেরি একজন স্পোর্টস এজেন্ট, যাকে কর্মক্ষেত্রে বারবার অন্যের অসততা এবং রোষের শিকার হতে হয়। শেষে তিনি নিজেই একটি সংস্থা তৈরি করেন।

দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে ছোটবেলা থেকে শুরু করে রাজনীতিতে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলা হিসাবে তাকে যে সব কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়েছেন স্মৃতি ইরানি।

লিখেছেন, 'মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য বা বাড়ির জিনিসপত্র কিনতে যখনই রাস্তায় বেরিয়েছি, সকলে বলেছেন, ছেলেরা যদি পিছু নেয়, কোনো অশালীন মন্তব্য করে, তাহলে চুপ করে হেঁটে চলে যাবে। কোনো উত্তর দেবে না।'

স্মৃতির প্রশ্ন, 'কেন উত্তর দেব না? কেন চুপ করে থাকব? যতই অপমানিত হই, কিছু বলব না?

একইসঙ্গে লিখেছেন, ছোটবেলা থেকে সকলে তাকে বুঝিয়েছেন, প্রতিবাদ করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। কারণ তিনি মেয়ে। ছেলেদের কোনো ক্ষতি হবে না।

'কিউ কি সাস ভি কভি বহু থি' সিরিয়ালে অভিনয় করার আগে বেশ কিছুদিন মডেলিং করেছেন স্মৃতি ইরানি। ফেসবুকে লিখেছেন, 'যখন অভিনয় জগতে নিজের জায়গা তৈরির জন্য লড়াই করছি, তখন শুনতে হয়েছে, পার্টিতে যাও, প্রযোজক-পরিচালকদের সঙ্গে মেলামেশা কর। কাজ পেতে হলে এগুলো দরকার!'

স্মৃতি-কথায় তারপর রাজনীতির প্রসঙ্গ। মন্ত্রীর আক্ষেপ, তিনি অন্য অনেকের মতো অভিনয় জীবন শেষ হয়ে যাওয়ায় বা চাকরি না-পেয়ে রাজনীতিতে আসেননি। এসেছেন এমন সময়, যখন অভিনেত্রী হিসেবে তার হাতে যথেষ্ট কাজ।

তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত তিনিই প্রথম মহিলা যিনি সবচেয়ে কম বয়সে রাজ্যসভার এমপি হয়েছেন। বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, তা সত্ত্বেও বারবার কেন তাকে 'আনপড়' অর্থাৎ 'অশিক্ষিত' বলা হবে? কেন তার ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে!

স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রভূত বিতর্ক থাকলেও মন্ত্রী যদিও কোনো দিনই স্পষ্ট করে জানাননি, আসলে তিনি কতদূর পড়াশোনা করেছেন!

পোস্টের শেষে মন্ত্রী হিসেবে এমন ২১টি কাজের কথা লিখেছেন, যা তিনিই শুরু করেছেন এবং দেশে প্রথমবারের জন্য হচ্ছে। প্রতিটির শেষে লিখেছেন, 'চেক' (যাচাই করে নিন)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত