সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৬ ০৩:৫৬

বিদেশীদের ‘কালো সন্তান’ ও ‘নরখাদক’ বলতেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসন

ডেভিড ক্যামেরন সরকারের পদত্যাগের পর নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বেক্সিটপন্থী নেতা বরিস জনসনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে কটূকথা বলতে অভ্যস্ত এ ব্রিটিশ পরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মানতে পারছে না অনেকেই। এখন বরিস বধের মন্ত্র জপতে শুরু করেছে বিশ্বের অনেক রাজনীতিক ও প্রধান প্রধান গণমাধ্যমগুলো।

ব্রিটেনের প্রধান কূটনীতিক হিসেবে বরিস জনসনের এই পদায়ন মানতে পারেনি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। বরিসের বিতর্কিত উক্তিগুলোকে একত্রিত করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

তাদের দাবি, প্রবল সমকামিতাবিরোধী এই নেতা সমলিঙ্গের বিয়েকে অভিহিত করেন ‘কুকুর সঙ্গম’ হিসেবে।

এদিকে ভিনদেশীদের প্রতি তার রয়েছে নাক সিটকানোর রীতি। বিদেশীদের ‘কালো সন্তান’ ও ‘নরখাদক’ প্রভৃতি বিশেষণে অভিহিত করতেন বরিস।

এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কেও তিনি কটু কথা বলতে অভ্যস্ত দাবি করেছে প্রতিবেদনটি। তারা বলছে, হিলারিকে ‘মানসিক হাসপাতালের একজন ধর্ষকামী রোগী’ হিসেবে মনে করেন বরিস।

দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত নিজের বিভিন্ন লেখায় কঙ্গো ও নামিবিয়ার নাগরিকদের ‘তরমুজের মতো হাসি সর্বস্ব এবং কুৎসিত মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

এছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিনকে হ্যারি পটার সিনেমার ভৃত্যের চরিত্র ‘ডবি’ বলে অভিহিত করেছেন এই বর্ণবাদী নেতা।

২০১৫ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ছাগলের অশালীন সম্পর্ক নিয়ে কবিতাও লিখেছেন তিনি। এমনকি জাপানে ভ্রমণে গিয়ে স্কুলছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে- এমনটাই দাবি করেছে প্রতিবেদনটি।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ‘জাতিকে বিভাজনকারী ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে বরিস জনসনকে। প্রতিবেদনটি আরও বলছে, ‘ব্রেক্সিট গণভোটে জয়ের পর সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের জায়গায় নিজেকে অভিষিক্ত করার পরিকল্পনা করছিলেন বরিস। কিন্তু শেষ মুহূর্তের দলাদলিতে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। তবে দুই সপ্তাহের মাথায় আবারও দেশটির সর্বোচ্চ কূটনীতিকের পদ দখল করলেন তিনি।’ তার এই প্রত্যাবর্তনের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে দায়ী করছে পত্রিকাটি।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ‘নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় পদে নিয়োগ দিয়ে রাজনৈতিক সক্ষমতা বাড়ালেন তেরেসা, তবে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিলেন তিনি।’

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্রেক্সিটপন্থী নেতা হিসেবে বরিস জনসন আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর ছিলেন, এখন ব্রিটেনের প্রধান কূটনীতিক হিসেবে তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হবেন।’

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও মন্তব্য চলছে। বরিস জনসন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ পাওয়ার পর টুইটারে নিজের মতামত লিখে বিস্ময় প্রকাশ করেন সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিলথ। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি একটি রসিকতা। কিন্তু আমি আতংকিত যে এটি আসলে কোনো রসিকতা নয়। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’

অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের নিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবনা-চিন্তার জন্য পরিচিত জনসনের এ নতুন দায়িত্বের খবর শুনে হাসি চেপে রাখতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার।

আর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জ্যঁ মাহ কেহু বলেছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘বরিস জনসন একজন মিথ্যাবাদী’। ‘তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’

ইউরোপ ওয়ান বেতারে মাহ কেহু বৃহস্পতিবার বলেন, জনসন ইইউ গণভোটের প্রচারের সময় ব্রিটিশ জনগণকে মিথ্যা বলেছিলেন। এখন তিনি দেশকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য চাপের মুখে পড়বেন।

তিনি আরও বলেন, ফ্রান্সের একজন বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আলোচক দরকার, যার ওপর আস্থা রাখা যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত