সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৮:৫৩

শৈশবে ধর্ষিত, পুলিশ হয়ে ধর্ষককে গ্রেফতার

শৈশব যে কোনো মানুষের কাছেই এক আনন্দময় সময়। আর তাই মানুষ বড় হয়ে বারবার ফিরে যেতে চায় শৈশবে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সঙ্গে শিশুকালে এমন ঘটনা ঘটে যা দুঃস্বপ্ন হয়ে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়ায়।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল আট বছরের শিশু ক্রিস্টিনার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তবে অন্যদের সঙ্গে তার পার্থক্য এখানেই- তিনি তার দুঃস্বপ্নকে পরে সুখস্মৃতিতে পরিণত করতে পেরেছেন।

এই দুঃস্বপ্নের জন্য দায়ী ব্যক্তি এরলিস জোসেপ কাইসন বর্তমানে জেলে। কাইসন তার অপরাধের জন্য সাজা ভোগ করছে।

চলতি বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ৪৭ বছরের কাইসন এক শিশুকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়। আদালত তাকে তিনটি ভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। একটিতে যাবজ্জীবন ও দুটি পৃথক মামলায় সাত বছরের সাজা ভোগ করতে হবে তাকে। ৪২ বছর পর্যন্ত প্যারোলে জামিনও পাবে না সে।

কাইসন লুসিয়ানা ও টেক্সাসে চার বছর ধরে যে শিশুটিকে নির্যাতন করেছে বর্তমানে তার বয়স ২৭। একই অপরাধে সে এর আগেও লুইজিয়ানায় জেল খেটেছে।

সেই ক্রিস্টিনা এখন পুলিশ অফিসার। সেই লোকটিকে জেলে পাঠানোর ক্ষমতা এখন তার আছে- এই উপলব্ধি হওয়ার পরই কাজে নেমে পড়েন তিনি।

ক্রিস্টিনা টেক্সাসের মেকলেনান কাউন্টি শেরিফ অফিসের গোয়েন্দা বিভাগে এ অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শৈশবে তিনি যে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা গোয়েন্দা বিভাগকে বিস্তারিত জানান। এরপর কাইসনকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

এর জন্য একটু কৌশল নেন তিনি। কাইসনকে ফোন করে দেখা করার লোভ দেখান। কাইসনও রাজি হয়। ক্রিস্টিনা লুকিয়ে একটি টেপ রেকর্ডার নিয়ে যান এবং সাক্ষাৎ স্থানের কাছেই তার এক সহকর্মীকে লুকিয়ে রাখেন।

সাক্ষাতে কাইসন ক্রিস্টিনার সঙ্গে অনেক ভালো বন্ধুর মতো গল্প করতে থাকে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলাপের সময় কাইসন অন্তত ছয়বার যৌন হয়রানির কথা নিজমুখে স্বীকার করে।

এ সময় কাইসন পুরুষদের এমন আচরণের জন্য নারীদেরই দোষারোপ করে বলে, বেশিদূর যাওয়ার আগেই তুমি এটা বন্ধ করতে পারতে!

আদালতে রেকর্ডার চালু করে বিচারককে শুনানো হয়। তখনও কাইসন বলে, আমি বলতে চাচ্ছি এক হাতে তালি বাজে না। এমন নয় যে আমি তোমাকে জোর করেছি। তবে এটা ঠিক যে আবেগ কোনো বাধা মানে না। তুমি ছোট ছিলে। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

এ সময় ক্রিস্টিনা আদালতকে বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এ ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। পুলিশের প্রশিক্ষণ নিতে এসে অপরাধীকে ধরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ক্রিস্টিনা বলেন, আমার পেশা আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা। আর আমি যদি নিজেকেই রক্ষা করতে না পারি, তবে অন্যদের কীভাবে রক্ষা করব!

এখন কাইসন জেলে। অনেক দিন পরে হলেও অপরাধের শাস্তি সে পেয়েছে। ক্রিস্টিনার শৈশবের সেই দুঃস্বপ্ন এখনও মন থেকে মুছে না গেলে অন্তত স্বস্তি এসেছে।

সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত